ঢাকাশুক্রবার , ৯ জুলাই ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তালেবানদের টেকাতে আফগান নারীরা অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুলাই ৯, ২০২১ ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন উত্তর ও মধ্য আফগানিস্তানের নারীরা। তালেবানের উত্থানের বিরোধিতায় শত শত নারী রাস্তায় নেমে মিছিল করছেন। অনেকেই আবার অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে মিছিলের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। এমন একটি মিছিল হয়েছে মধ্যাঞ্চলীয় ঘোর প্রদেশে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেখানে শত শত নারী রাস্তায় নেমে এসে অস্ত্র উঁচিয়ে তালেবানবিরোধী স্লোগান দেন।

তবে এসব নারী খুব শিগগিরই সামনের সারিতে গিয়ে তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে নামবেন- তা নয়। কারণ, সামাজিক রক্ষণশীলতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অভিজ্ঞতার অভাব। তবে যে মুহূর্তে আফগানিস্তানে দ্রুত তালেবানের উত্থান ঘটছে সেই সময়ে নারীদের এই মিছিল স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, তালেবানদের অধীনস্থ হওয়াটা তাদের এবং পরিবারের জন্য কতটা ভীতিকর।

ঘোর প্রদেশের নারী বিষয়ক দফতরের প্রধান হালিমা পরশতীশ বলেন, “কোনও কোনও নারী কেবল নিরাপত্তা বাহিনীকে উৎসাহ দিতে চান প্রতীকীভাবে। কিন্তু অনেকেই আছে যারা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এরমধ্যে আমিও আছি। মাস খানেক আগে আমি এবং আরও কয়েকজন নারী গভর্নরকে বলেছি যে ‘আমরা যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত’।”

সম্প্রতি আফগানিস্তানের বহু প্রান্তিক এলাকা দখলে নিয়েছে তালেবান। উত্তরাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশসহ বহু জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। অথচ ২০ বছর আগেও এসব এলাকায় ছিল তালেবান বিরোধীদের শক্ত অবস্থান। কিন্তু বর্তমানে তালেবানরা বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানী শহরও দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে।

যেসব এলাকা তালেবানরা দখলে নিয়েছে সেখানকার অ্যাক্টিভিস্ট ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নারীদের শিক্ষা, চলাফেরার স্বাধীনতা এবং পোশাকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এরকম একটি এলাকায় নারীদের বোরকা পরার নির্দেশনা দিয়ে প্রচারপত্র ছড়ানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, আফগানিস্তানের দুর্গম ও চরম রক্ষণশীল এলাকার নারীরাও এখন আরও বেশি শিক্ষা, চলাচলের স্বাধীনতা, পরিবারে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে চান। তবে তালেবানের শাসন তাদের ভিন্ন পথে নিয়ে যাবে।

লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে চান তারা

উত্তরাঞ্চলীয় আফগানিস্তানের জোজানে নারীদের লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দা এক তরুণ নারী সাংবাদিক বলেন, ‘কোনও নারীই যুদ্ধ চায় না, আমি কেবল পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই আর সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চাই, কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে এবং অন্য নারীদের ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।’

প্রাদেশিক রাজধানীতে ওই নারী সাংবাদিক অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সম্প্রতি এই শহরটি দখল করে নিয়েছে তালেবান। নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ওই সাংবাদিক বলেন, ‘আমি চাই না এমন কেউ দেশের নিয়ন্ত্রণ নিক যারা নারীদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করে। আমরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছি এটা দেখাতে যে প্রয়োজনে আমরাও লড়াই করবো।’

তার সঙ্গে আরও বহু নারী অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানান তিনি। অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তালেবানদের মুখোমুখি হলে একটা সুবিধা নারীদের বেশি বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘তারা আমাদের কাছে নিহত হতে ভয় পায়। কারণ, এটা তাদের জন্য লজ্জাকর হবে।’

লড়াইয়ে নতুন নয় আফগান নারীরা
আফগানিস্তানে নারীদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার খবর বিরল হলেও অভূতপূর্ব নয়। বিশেষ করে কম রক্ষণশীল এলাকার নারীদের কেউ কেউ এমনটা করেছেন। গত বছর বাবা-মাকে হত্যার পর অস্ত্র হাতে নিয়ে তালেবানদের একটি গ্রুপকে হটিয়ে দিয়ে আলোচনায় আসেন কামার গুল নামের এক তরুণী। তালেবান সদস্যদের মধ্যে তার স্বামীও ছিল।

সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় এবং এর পরবর্তী গৃহযুদ্ধে আফগানিস্তানের একমাত্র নারী ওয়ারলর্ড হয়ে উঠেছিলেন বাগলান প্রদেশের বিবি আয়শা হাবিবি। তাকে সবাই কমান্ডার কাফতার বা কবুতর নামেই জানেন। এছাড়া সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলীয় বালখে ৩৯ বছর বয়সী সালিমা মাজারি সম্মুখ সারিতে লড়াই করছেন। তিনি সেখানকার একটি জেলা গভর্নর।

গত দুই দশকে নিরাপত্তা বাহিনীতেও যোগ দিয়েছে আফগান নারীরা। হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তারা। যদিও সহকর্মীদের বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা। সম্মুখ সারির লড়াইয়েও তাদের অংশগ্রহণ।

এসব ইতিহাস সত্ত্বেও নারীদের লড়াইয়ে অংশগ্রহণকে পাত্তাই দিতে চাইছে না তালেবান। তাদের দাবি, এসব মিছিল প্রোপাগান্ডা। পুরুষেরা নারী স্বজনদের লড়াই করতে দেবে না। তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘নারীরা কখনোই আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না। তারা অসহায় ও পরাজিত শত্রুরা তাদের বাধ্য করছে। তারা যুদ্ধ করতে পারে না।’

ঘোরের প্রাদেশিক গভর্নর আবদুল জহির ফয়েজজাদা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ফিরোজকোহেতে যেসব নারী মিছিল করেছেন তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, আর বেশিরভাগই গ্রুপটির সহিংসতা থেকে মুক্তি পেতে চায়।

গভর্নর আবদুল জহির ফয়েজজাদা বলেন, ‘এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীরা সম্প্রতি তালেবান এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন। নিজেদের গ্রামে তারা ইতোমধ্যে যুদ্ধ করেছেন, সন্তান ও ভাই হারিয়েছেন, তারা ক্ষুব্ধ।’

তিনি আরও বলেন, সরকার অনুমোদন দিলে অনভিজ্ঞ নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে চান তিনি।

পাল্টা লড়াই কেন করবো না

তালেবানের রক্ষণশীল শাসন ঘোর প্রদেশে স্বাগত জানানো হবে না। সেখানে নারীরা ঐতিহ্যগতভাবেই বোরকার পরিবর্তে হেডস্কার্ফ ব্যবহার করেন আর পুরুষের পাশাপাশি মাঠ ও গ্রামে কাজ করে থাকেন।

ঘোর প্রদেশের নারী বিষয়ক দফতরের প্রধান হালিমা পরশতীশ জানান, প্রদেশটির যেসব এলাকা তালেবানরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সেখানে ইতোমধ্যে নারীদের প্রাণী দেখাশোনা করা কিংবা মাঠে কাজ করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দিয়ে তারা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এমনকি বিয়েতে নারীদের জমায়েতও নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছে কেবল পুরুষেরা সমবেত হতে পারবে। মিছিলকারীদের মধ্যে এসব এলাকার নারীরাও রয়েছেন, বলেন হালিমা

পরশতীশ বলেন, ‘গত সপ্তাহে আল্লাহার থেকে কিছু নারী পালিয়ে এসে আমাদের কাছে অস্ত্র চেয়েছে। তারা তাদের ভূমি ও অধিকারের জন্য লড়াই করতে চান। চারসাদ্দা এলাকাতেও একই অবস্থা।’

তিনি বলেন, “নারীরা বলছেন, ‘আমরা নিজেদের রক্ষার বদলে মারা যাচ্ছি, আহত হচ্ছি, পাল্টা লড়াই কেন করবো না?’”

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com