ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৮ নভেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুগন্ধা পয়েন্টে নির্মাণাধীন অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ হচ্ছে

প্রতিবেদক
সিএনএ

নভেম্বর ৮, ২০১৮ ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বালিয়াড়ি দখল করে নির্মাণাধীন মার্কেটের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে লোহার এঙ্গেল দিয়ে নির্মাণাধীন মার্কেট থেকে টিনের ছাউনি তুলে নেয়া হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সৈকতের বালিয়াড়িতে নির্মাণাধীন মার্কেটের টিনের ছাউনি সরিয়ে নিচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক। প্রায় অধিকাংশ দোকানের টিনের ছাউনি খুলতে দেখা যায় শ্রমিকদের। ওসময় একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৬ নভেম্বর রাত থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মুটোফোন কোম্পানীর পক্ষ থেকে মার্কেট নির্মাণ সামগ্রী সরাতে দেখা গেছে। তারা আরও বলেন, বুধবার সকালে জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট মার্কেটের টিন তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়।
জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতের ৩০০ মিটারের মধ্যে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি দখল করে মার্কেট ও দোকান নির্মাণ শুরু করে জেলা প্রশাসনের বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহল।
সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ি দখল করে মার্কেট ও দোকান নির্মাণের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর টনক নড়ে প্রশাসনের।
এছাড়া শত বাঁধাকে উপেক্ষা করে সর্বপ্রথম কক্সবাজারের সামাজিক সংগঠন “আমরা কক্সবাজারবাসী”র ব্যানারে নাজিম উদ্দিন, সাংবাদিক মহসীন শেখ, করিম উল্লাহ কলিম, মানিক বৈরাগী, অনিল দত্ত, সমির পাল, কল্লোল দে চৌধুরী, নাজমুল হোসেন মিঠু, ফয়সাল ও ফাতেমা আক্তার মার্টিনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে মার্কেট ও দোকান নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন, স্বারকলিপি প্রদান, গণ স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে। পরে আন্দোলনের বিষয় এবং তা নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি অবগত করা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিকে (বেলা)।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেলার পক্ষ থেকে বালিয়াড়ি দখল করে সমুদ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণাধীন মার্কেট উচ্ছেদের জন্য ৫ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কক্সবাজারকে আইনী নোটিশ দেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা)।
ওই নোটিশে আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেণ গ্রহণ করে বেলাকে অবহিত করার জন্য বলা হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করা হয়। বেলার নোটিশের পর ৭ নভেম্বর সকাল থেকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে ‘আমরা কক্সবাজারীবাসী’র মুখপাত্র নাজিম উদ্দিন বলেন, সৈকত কক্সবাজারবাসীর সম্পদ। সমুদ্র সৈকতে অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসে কক্সবাজারে। তবে সম্প্রতি একটি স্বার্থন্বেষী মহল সৈকতে একের পর এক দখল বেদখল অব্যাহত রেখেছে। এতে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন ধরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে মার্কেট ও দোকান নির্মাণ করা হয়। তবে সৈকতে ওসব অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে রহস্যজনকভাবে কোন প্রতিবাদ করতে কাউকে দেখা যায়নি। কিন্তু আমরা কয়েকজন মিলে শত বাঁধা থাকা সত্বেও ওসব অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করি। পাশাপাশি বিষয়টি বেলা’কে অবগত করা হলে ৩ সচিব ও জেলা প্রশাসক সহ ১০ জনকে আইনী নোটিশ দেয়া হয়। এরপর অবশেষে গতকাল থেকে সৈকতে নির্মানাধীন মার্কেটের দোকান সরিয়ে নেয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন। সৈকতের ৩০০ মিটারের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উচ্চ আদালতের রায়কে বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনের প্রতিও অনুরোধ জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম শেখ বলেন, মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে বেলা আপত্তি তোলায় নির্মাণাধীন মার্কেটের স্থাপনা উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com