ঢাকামঙ্গলবার , ৬ নভেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উখিয়ায় চলিত মৌসুমে সুপারি চাষে বাম্পার উৎপাদন

প্রতিবেদক
সিএনএ

নভেম্বর ৬, ২০১৮ ৭:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তারেকুল ইসলাম:চলিত মৌসুমে সুপারি চাষীরা উৎপাদিত সুপারি বিক্রি করে ব্যাপক লাভবান হতে হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য ফসলের চাইতে সুপারি চাষাবাদ লাভজনক ব্যবসা হিসাবে উপকূলীয় এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন সুপারি বাগান করেছে। সুপারি গাছ একবার রোপন করলে পরবর্তীতে তেমন আর কোন পরিচর্যা বা সুপারি রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ভার বহন করতে হয় না।
কোন প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই সুপারি বাগান ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত বিদ্ধমান থাকে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সুপারী ব্যবসায়ী রেজাউল করিম। তিনি জানান, উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে কৃষকেরা বেশি পরিমাণ লাভবান হচ্ছে। সুপারি বাগানে পোকা মাকড় ও কোন প্রকার রোগ বালাই সহজে আক্রমন করতে পারে না বিধায় সুপারি চাষীদের বাগান নিয়ে কোন রকম টেনশনে থাকতে হয় না।
চলতি মৌসুমে সুপারি বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে উখিয়ার উপজেলার সোনারপাড়া, উখিয়া সদর দারোগা বাজার, কোর্টবাজার, মরিচ্যাবাজার, বালুখালী বাজারসহ এলাকার আনাচে কানাছে গড়ে উঠা ছোট বড় হাটবাজারে জমজমাট সুপারি কেনা কাটা চলছে।
উখিয়া সদরের সুপারি ব্যবসায়ী আসমত আলী জানান, উখিয়ায় উৎপাদিত ২৫ ভাগ সুপারি পানির হাউজে অথবা পানি ভর্তি ড্রামে ভিজিয়ে রাখা হয়। ৩ মাস পর ওই সুপারি ভিজা সুপারি হিসাবে পরিণত হয়ে তার কদর আরো একধাপ বেড়ে যায়।
স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি মৌসুমে লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার সুপারি পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখেন মৌসুমে বিক্রি করার জন্য। বাদ বাকী ২৫ ভাগ সুপারি স্থানীয় ভাবে বাজারজাত হয়ে থাকে। উদ্ধৃত ৫০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে থাকে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, অন্যান্য জেলার সুপারির চাইতে উখিয়ার সুপারি গুণগতমান সম্পন্ন। যে কারণে এখানকার সুপারি ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন।
স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, বর্তমানে উখিয়ার হাটবাজারে ৮০টি সুপারির (একপন) দাম হাকা হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। সুপারির এমন মৌসুমে দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু পাইকারী ব্যবসায়ীরা সুপারির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানাগেছে, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারির গাছে গাছে ফুল আসে। এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারির পুরোপুরি পাকা ধরতে কার্তিক অগ্রহায়ন মাস চলে আসে। এসময় সুপারির ভরা মৌসুম হিসেবে পরিচিত। মৌসুমের শুরুতেই ভাল দাম পাওয়ার কারণে অনেকেই আধা পাকা সুপারি বাজারে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সুপারি চাষী শামশুল আলম বলেন, সুপারি গাছের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষনে যদি উপজেলা কৃষি অফিস নিয়মিত সহযোগীতা ও তদারকি করলে তবে আরও ভালো সুপারির ফলন উৎপাদন করা যেতো উখিয়াতে।
উপজেলার সোনারপাড়া বাজারে পাইকারী সুপারি ব্যবসায়ী ছৈয়দ হোছন জানান, চলতি মৌসুমে উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে।
এনিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম ও উপ-সহকারি কৃষি অফিসার শাহজাহান জানান, বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। তারা জানায়, এখানকার মাটি, আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী।
তবে এটাই সত্য যে সম্প্রতি সুপারি বাগানের মধ্য দিয়ে এখানকার অধিকাংশ হতদরিদ্র কৃষক আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com