ঢাকাসোমবার , ৫ জুলাই ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দোকান মালিকেরা এখনো বুঝে উঠতে পারননি করোনার ভয়াবহতা আসলে কি

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুলাই ৫, ২০২১ ১১:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (৪ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৫ জুলাই সকাল ৮টা) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং নতুন রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে।

করোনার এই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতিতেও দোকান খোলা রাখতে চান দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। সোমবার (৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবির কথা জানান তারা।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো খোলা চিঠিতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে অল্প সময়ের জন্য হলেও দোকান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ চান তারা।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক তৌফিক এহেসান, সদস্য সচিব আনিসুল মান্নান সাহেদ, কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি নাজমুল হাসান মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিপু।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে তারা দোকান খুলে দেওয়ার পাশাপাশি আড়াই কোটি দোকান-কর্মচারীকে রেশন কার্ডের আওতায় আনার দাবি জানান। এছাড়া তারা বিদ্যুৎ বিল কিস্তি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির অনেকে পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন। তারা আজ নিঃস্ব। তাদের আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনতে সহজ শর্তে ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে আর্থিক ঋণ বা প্রণোদনা দেওয়ার দাবিও করা হয়।

সংক্রমণের এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কী বুঝে দোকান খুলে দেওয়ার জন্য বলছেন জানতে চাইলে দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক তৌফিক এহেসান বলেন, এখন আমাদের ভয়াবহ অবস্থা। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, বাড়ি মালিক কিন্তু আমাদের ছাড় দেবে না। তারা তাদের বিল নেবেই। আমাদের এবং কর্মচারীদের চিকিৎসা ও খাওয়া দাওয়া কোত্থেকে আসবে। যদি অল্প কয়েক দিনের জন্য সীমিত পরিসরে কঠোর নির্দেশনা বেঁধে ঈদের সময় দোকান খোলার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কিছু সময় চলতে পারি।

কোরবানি ঈদে আমরা কর্মচারীদের হাফ বোনাস দিয়ে থাকি। রোজার ঈদে ফুল বোনাস দেই। এখন যদি দোকানপাট বন্ধ থাকে তাহলে আমরা এটা কীভাবে দেবো?

পূর্বে লকডাউনে দোকানপাট খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু দোকানদারসহ কেউ শর্ত মানেনি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবাই পুঁজি ভাঙতে ভাঙতে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন অনেকেরই পুঁজি বন্ধ হয়ে গেছে। যারা ব্যাংকের ঋণ নিয়েছিল সেগুলো খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি, উনি যদি সহনশীলতার সঙ্গে ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাংক ঋণ দিয়ে নতুন করে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে দেন, তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, করোনা তো এই পৃথিবীতে বেড়াতে আসেনি। সে থাকবে। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের যুদ্ধ করে থাকতে হবে। এই লকডাউন কত তারিখে শেষ হবে তারও কিন্তু দিন তারিখ নেই।

১৪ দিন কঠোর লকডাউনে সংক্রমণ কমে আসবে এমন তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা চেয়েছি সেটা হচ্ছে ঈদ সামনে রেখে কয়েক দিন যদি এই সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে মানুষ কিছু কেনাকাটা করতে পারতো। সেই টাকাটা নিয়ে মানুষ বাড়িতে যেতে পারতো।’

এদিকে দোকান মালিকদের এমন দাবিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, সবকিছু খুলে দেওয়া হোক, আর কিছু বলার নেই।

তিনি আরও বলেন, সব খুলে দিয়ে একশভাগ মাস্ক পরার নির্দেশনা দেওয়া হোক। তবে মাস্ক পরার নির্দেশনা মানুষ মানবে কিনা- এ প্রসঙ্গেও আক্ষেপ করে তিনি বলেন, পুলিশ, বিজিবি, আর্মি নামিয়ে কিছুই হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যদি অনুমতি নাও দেন তাহলেও দোকান মালিক সমিতি সব খুলে দেবে হয়তো- তখন কী হবে, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

মহামারি বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠা (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোকানিদের সমস্যাটা বেশি। সরকার এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের চলার একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া।

দোকান খুলে দেওয়া অবশ্যই সমর্থন করি না মন্তব্য করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কিন্তু যারা কর্মচারী আছেন তাদের ঘরে ভাত রয়েছে কিনা তার ব্যবস্থা করা উচিত। আর এখানেই জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে। সেটা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, মনিটর করা দরকার।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com