ঢাকাবুধবার , ৭ জুলাই ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনায় প্রতি জন রোগীর বরাদ্দ ৩০০, খাবার পান ১০০ টাকার!

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুলাই ৭, ২০২১ ১১:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের করোনা রোগীদের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার

রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে একজন করোনা রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ৩০০ টাকা সরকারি বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার খাবার। একজন রোগীকে তিন বেলা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও সকালের নাশতায় কলা, পাউরুটি ও ডিম দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এদিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের আরও কম দামের খাবার দেওয়া হয়। এখানে একজন রোগীকে তিন বেলা যে খাবার দেওয়া হয় তার বাজার মূল্য ৬০-৭০ টাকা।

সরেজমিন রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিট ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য গত বছর রংপুর নগরীর শিশু হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতাল করা হয়। ১০০ শয্যার হাসপাতালে আটটি আইসিইউ রয়েছে। ৯১টি শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধীনে এই হাসপাতাল পরিচালিত হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, রংপুর করোনা হাসপাতালে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর খাবারের জন্য ৩০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফলমূল দেওয়ার কথা রয়েছে রোগীদের। কিন্তু নিম্নমানের খাবার দেওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে বাড়ি থেকে খাবার এনে খেতে হয়।

রোগীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে একজন রোগীকে সকালের নাশতায় পাঁচ টাকা দামের দুই পিস পাউরুটি, আট টাকা দামের একটি ডিম ও পাঁচ টাকা দামের একটি কলা দেওয়া হয়। দুপুরে সর্বোচ্চ ১৫ টাকার এক প্লেট ভাতের সঙ্গে দেওয়া হয় আধা বাটি সবজি; যার মূল্য ১০ টাকা, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ; যার মূল্য ১০-২০ টাকা। রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে সবজি, এক টুকরো মাছ অথবা এক টুকরো পোলট্রি মুরগির মাংস দেওয়া হয়; যার দাম ২০ টাকা। মাঝে মধ্যে রাতে ১০ টাকা দামের একটি আপেল দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বর্তমান বাজার দরে তিন বেলার খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ১০০-১০৩ টাকা।

হাসপাতালে ভর্তি আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুনেছি প্রত্যেক রোগীর জন্য সরকারি বরাদ্দ ৩০০ টাকা। কিন্তু তিন বেলায় ১০০ টাকারও খাবার দেওয়া হয় না। মাঝে মধ্যে একটা আপেল দেয়। সকালের নাশতা খাওয়ার উপযোগী না।

সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া সবুর আহমেদ বলেন, ‘দুই সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলাম। যে খাবার দেওয়া হয়েছে, তা খাওয়ার মতো না। বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার এনে খেয়েছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে ভর্তি দুজন রোগী জানান, সাত দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিন দিন আইসিইউতে ছিলেন। দুই দিন অক্সিজেন দিতে হয়েছে তাদের। এ সময় কোনও খাবার পাননি। কিন্তু কাগজ-কলমে লেখা আছে তারাও তিন বেলা খাবার পেয়েছেন।

হাসপাতালে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাসপাতালের ১০০ শয্যায় সব সময় রোগী ভর্তি থাকেন। এর মধ্যে অন্তত ২০-২৫ জন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট আর অক্সিজেন দিতে হয়। ওসব রোগীকে খাবার দিতে হয় না। তাদের তরল খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে তরল খাবার দেওয়া হয় না। অথচ তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ আছে। ৩০০ টাকার সরকারি বরাদ্দে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার খাবার দেওয়া হচ্ছে। ১০-১৫ জন রোগী হাসপাতালের এই খাবার গ্রহণ করেন। বাকিদের বাইরে থেকে এনে খাওয়ান স্বজনরা। অথচ খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ১০০ রোগীর খাবারের বিল নিচ্ছে প্রতিদিন। খাবার নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। রোগীরা অভিযোগ করলেও কোনও কাজ হয় না।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বলেন, রংপুর করোনা হাসপাতালে সরকারের দেওয়া খাবারের অর্থ লুটপাট হচ্ছে। ৩০০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকার খাবারও পান না রোগীরা। এসব অনিয়ম তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

জানতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম বলেন, করোনা রোগীদের খাবার নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ এ নিয়ে অভিযোগও করেনি। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্ষিয়টি জানাতে পারবো বলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।

রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতাল
এদিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২ রোগী। সকালের নাশতায় তাদের দেওয়া হয় পাঁচ টাকা দামের পাউরুটি, আট টাকা দামের ডিম ও পাঁচ টাকা দামের কলা। দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে ডাল, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ এবং রাতের খাবারেও ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ অথবা একটি ডিম দেওয়া হয়। বর্তমান বাজার মূল্যে তিন বেলার খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ৬০-৭০ টাকা। এখানে খাবারের সঙ্গে কোনও ফলমূল দেওয়া হয় না।

হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি এক রোগী বলেন, সকালের নাশতায় পাউরুটি-কলা দেয়। এসব খাওয়া যায় না। সাত দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি, কোনও ফলমূল পাইনি। ফল তো দূরের কথা, দুপুর ও রাতের খাবারই খেতে পারি না। মানসম্মত খাবার দিলে অন্তত রোগীদের উপকার হতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন এক রোগী জানান, সকালের নাশতা পরিবর্তন করা জরুরি। করোনা রোগীরা পাউরুটি-কলা খেতে পারে না। ভাত শক্ত থেকে যায়। তরকারি রান্না হয় না। অধিকাংশ রোগী এসব খাবার ফেলে দেয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন জামাল হোসেন বলেন, ‘খুবই নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। ভাত-তরকারি কিছুই খাওয়া যায় না। আমি প্রতিদিন রোগীর জন্য বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসি। ওই খাবার নিয়ে ওয়ার্ডের ভেতরে যেতে ভয় হয়। কারণ সবাই করোনা রোগী।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের করোনা রোগীদের খাবার সরবরাহ করেন ঠিকাদার আজাহার আলী। তিনি হাসপাতাল থেকে জনপ্রতি ৩০০ টাকা করেই বিল নেন। এরপর ওই টাকা হাসপাতালের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।

আজাহার আলী বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী খাবার দিচ্ছি। তালিকা অনুযায়ী সব ধরনের খাবার দেওয়া হয়। ফলমূল ও হরলিক্স দিই। তবে কারও মাঝে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয় না।’

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখবো।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com