ধর্ষণের ঘটনা দুই লাখ টাকায় ধামাচাপা, নেপথ্যে মেম্বার মিজান!
(আনোয়ার হোছন)
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নে এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এক তরুনীকে ধর্ষণের দায় থেকে মোহাম্মদ রফিক (২৪) নামে এক যুবককে দুই লাখ টাকায় রেহাই দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি থানাকে জানানোর কথা থাকলেও বিচার-সালিশের মাধ্যমে শেষ করার চেষ্টা করেছেন মেম্বার মিজান ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে পিএমখালী ইউনিয়নের ফুরাকাটা রশিদের ঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ধর্ষক মোহাম্মদ রফিক ঐ এলাকার সৈয়দ নুরের ছেলে বলে জানা যায়।
প্রতিবেশী ও ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ- মোহাম্মদ রফিক ও তার বাড়ির দুরত্ব এক কিলোমিটার। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় তরুনীর বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতো রফিক। সে সুবাধে পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। সেখান থেকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তরুনীর সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। তরুনী যখন অন্তসত্বা হয়ে পড়েন তখন বিষয়টি দুই পরিবারকে জানায়। তখন মেয়ের পরিবার মেনে নিলেও মানতে নারাজ রফিকের পরিবার। তখনি উঠে বিপত্তি। তরুনীর পরিবার থানায় যেতে চাইলেও আসে বাঁধা। দেয়া হয় হুমকি-ধামকি। ধারাবাহিকভাবে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে রফিকের পরিবার। এক পর্যায়ে বিচার-শালিসে বসতে রাজি হয় ভুক্তভোগী ও তারপর পরিবার। ভুক্তভোগী আরো বলেন- বিচারে দুই পরিবার বসেছিলো। কিন্তু তারা কোনভাবে বিয়ে করতে রাজি নয়। পুরো বিষয়টা স্বীকার করলেও বিয়ে করতে রাজি হয় না। তখন মেম্বার মিজান ও বিচারে উপস্থিত লোকজন দুইলাখ টাকা দিয়ে তাকে রেহায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও আমি তার সংসার করতে চেয়েছিলাম।
তরুণীর মা বলেন- সৈয়ন নুর সন্ত্রাসী লোক। মেম্বার এ কথা বলায় আমরা দুইলাখ টাকায় রাজি হয়েছি। টাকা এখনো দেয়নি। মেম্বারের কাছে দেয়ার কথা। বিয়েতে আমরা রাজি ছিলাম। গরীব মানুষ বলে তারা ভয় দেখাচ্ছে হুমকি দিচ্ছে তাই মানতে বাধ্য হয়েছি। এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কখন আবার হামলা করে। বাড়িটা একটু পাহাড়ের কিনারায়। যেকোন মুহুর্তে হামলা করতে পারে। তিনি আরও বলেন- স্থানীয় একটি হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। সেখানে আমার মেয়ে ৫ মাসের অন্তসত্বা বলে জানিয়েছে চিকিৎসক। টাকার জন্য এখনো রিপোর্টের কাগজ আনতে পারেনি। থানায়ও যেতে পারছি না টাকা পয়সার জন্য।
অভিযুক্ত পিএমখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন- আইনগতভাবে বিষয়টি আমি করতে পারি না। তবে সামাজিকতা রক্ষায় সালিশি বৈঠকে বসেছি। উভয়পক্ষের সম্মতিতে আমি বিচার করেছি। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিল। পুলিশকে বিষয়টি জানাননি কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন-ছেলেটির পরিবারের সাথে মেয়েটির পরিবার পেরে উঠবে না তাই বিচার করে দিতে চেয়েছিলাম। যদি তারা না মানে তাহলে হবে না।
অভিযুক্ত মোহাম্মদ রফিকের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে তার বাবাও সাংবাদিক যাবার খবরে পালিয়ে যায়। মুঠোফোনে দুজনকে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র ফোন কেটে দেয়ায় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- মেম্বার কখনো এ কাজ করতে পারে না। যদি কেউ তাদের থানায় আসতে বারন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে যত ধরণের ব্যবস্থা নেয়া লাগে সব করবো এবং
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা বলেন- জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এই বিচার করতে পারেন না। এটি সংশ্লিষ্ট থানার ব্যাপার। যদি ভুক্তভোগী আমাকে অভিযোগ করে তাহলে আমি ব্যবস্থা নিবো।