কক্সবাজার পৌরসভার সচিব তিনি। নাম রাছেল চৌধুরী। তাঁর রয়েছে অনেক ক্ষমতা। এই ক্ষমতার জোরেই তিনি হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক।
নগরের বেভারলি হিলে রয়েছে রাছেলের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। রয়েছে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স। এসব নিয়ে সাতকানিয়ার ছদাহা গ্রামের আবুল মমতাজ চৌধুরীর ছেলে রাছেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ইতোমধ্যে তাঁর অঢেল সম্পদের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগ আছে, প্রায় দেড়শ কোটি টাকার কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রস্তাবনা কমিটির সদস্য না হয়েও প্রকল্পে ভূমি রয়েছে রাছেলের। ওই প্রকল্পের তপশিলোক্ত জমির রিসিভার থাকার পরও জেলা প্রশাসনের যোগসাজশে সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
জানতে চাইলে অভিযোগ স্বীকার করে কক্সবাজার পৌরসভার সচিব রাছেল চৌধুরী বলেন, আমি কমিটির প্রতিনিধি ছিলাম না। কিন্তু আমি ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করেছি মেয়র সাহেবের নির্দেশে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন রাছেল চৌধুরী। এমন অভিযোগ গেছে দুদকে। সেই অভিযোগ স্বীকারও করেছেন দুদকের কাছে। ওই প্রকল্পের অনিয়মের তদন্তে অভিযুক্ত হয়ে মামলার আসামি এখন সেই রাছেল চৌধুরী।
দুদক সূত্র জানায়, রাছেল চৌধুরী ওই প্রকল্পের প্রত্যাশিত কমিটির প্রতিনিধি নন। তপশিলোক্ত জমির রিসিভার থাকার সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করেছেন। তাঁর পদবি অনুসারে ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নেই। এ প্রকল্পের অনিয়মের তদন্তে তাঁকে আসামি করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর এলএ মামলা নম্বর ৪/২০১৯-২০ কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের ফিল্ডবুকে স্বাক্ষর রয়েছে রাছেল চৌধুরীর। এ মামলায় রাছেল চৌধুরীকে অভিযুক্ত করেছে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম কাঁপানো দুদক কর্তার বদলি রহস্যে বেঁচে যাচ্ছেন ‘রাঘববোয়ালরা’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডে বেভারলি হিল আবাসিক এলাকায় রাছেল চৌধুরীর কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে আরও প্রায় ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনে। বর্তমানে সেখানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
এছাড়া নগরের নাসিরাবাদ হাউজিংয়ে রয়েছে তাঁর আরও একটি ফ্ল্যাট। চলাফেরা করেন দামি গাড়িতে। তাঁর দায়িত্ব কক্সবাজার পৌরসভায় হলেও বেশিরভাগ সময় তিনি শহরেই কাটান। গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় রয়েছে গবাদি পশু ও মাছের খামার। সাতকানিয়া ও কক্সবাজার এলাকায় নিজ ও পরিবারের সদস্যের নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক জায়গা-জমি। বেসরকারি ডাচ বাংলা ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তাঁর জমা আছে মোটা অঙ্কের অর্থ।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজার পৌরসভার ঝিলংঝা ইউনিয়নের প্রকল্পের ভূমি অগ্রিহণের তদন্ত শুরু করেছে দুদক। প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে (এলএ মামলা ৪-২০১৯-২০ মূলে) ২ দশমিক ১৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ‘কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার স্থাপন’ প্রকল্পটি হাতে নেয় কক্সবাজার পৌরসভা। পরে প্রকল্পটিতে এশিয়ান ডেভেলপম্যান্ট ব্যাংক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে প্রায় শত কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রাথমিক পর্যায়ে কক্সবাজার পৌরসভার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ১০ লাখ লিটার সুপেয় পানি পাওয়া যাবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট পৌর মেয়র হিসেবে শপথ নেন। এরপর পানি শোধনাগার স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাগুলো প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শ্যালক মিজানুর রহমানের নামে কিনে নেন মেয়র মুজিব। তবে প্রস্তাবিত ওই জায়গা নিয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে কয়েক পক্ষের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে হিস্যা সংক্রান্ত মামলা (৫২/৮৬) চলে আসছিল।
অভিযোগ উঠেছে, জমি ক্রয়, নামজারি, অধিগ্রহণসহ পুরো প্রক্রিয়া হয়েছে দ্রুততার সঙ্গে। জমি কেনার রেজিস্ট্রেশন থেকে নামজারি, এলএ ক্ষতিপূরণ নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।
সূত্র : আলোকিত চট্টগ্রাম।