ঢাকাবুধবার , ৬ অক্টোবর ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন – প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেদক
সিএনএ

অক্টোবর ৬, ২০২১ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাহামান্য রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি গঠন করবেন। তার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনকে নির্বাচন হিসাবেই দেখি।

কখনো আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে এবং তাদের ভোট নিয়েই আবার ক্ষমতায় আসতে চাই। জনগণ ভোট দিলে আসব, নইলে আসব না।

সোমবার বিকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরার পর ওই সফরের বিস্তারিত জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গণভবনে দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের উপস্থিতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যু, ই-কমার্সের নামে প্রতারণা, করোনা ভ্যাকসিন, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য যে প্রতারণা করে, এটার শাস্তি অবশ্যই হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ডে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ নেই। রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের মনে হয় লাভই হয়।

অনেক প্রস্তাব আসে রোহিঙ্গাদের জন্য, এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই, যান মিয়ানমারে, ওখানে ঘর করেন, স্কুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়, (তাদের কাছে) সবকিছুই যেন একটা ব্যবসা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জন্য যা কিছু করার, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগই করেছে। এটি কারও ভালো না লাগলে তো বলার কিছু নেই। যারা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাদের কাছে প্রশ্ন করুন।

মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে? ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মানুষ কী পেয়েছে আর আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানুষ কী পেয়েছে, সেই তুলনা করুন এবং তারপরই বিবেচনা করুন।

শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় আমার লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। করোনা এসে কিছুটা বাধা দিয়েছে। তার পরও এমন ব্যবস্থা করলাম যে গ্রামে যেন অর্থ সরবরাহ হয়।

উন্নত দেশগুলোয় কী পরিমাণ খাদ্যাভাব, জানেন না। সব খবর পত্রিকায় আসে না। কিন্তু আমি জানি ভেতরের অবস্থা কী। সেখান থেকে সবাইকে উৎপাদন চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছি, যেন অভাব না হয়। শিল্পকারখানা সীমিত আকারে হলেও চালু রাখতে বলেছি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এত সুবিধা পেয়েও গালিটা আবার আওয়ামী লীগের ওপর দিয়েই যাচ্ছে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কারণ বাঙালি চরিত্রেই আছে, কেউ ভালো করলে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে হবে!

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নিজেদের আদর্শ নেই বলেই আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মকাণ্ডকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে চলেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওদের ভোট কে দেবে, আগে সেটা জিজ্ঞাসা করুন।

সাংবাদিকদের বলছি, কেন, কী কারণে কোন আশার আলো দেখে বিএনপি বা অন্যদের মানুষ ভোট দেবে, সেটা বলেন। শুনি, জেনে রাখি। আমরা কিছু করলাম কি না, এতটুকুও কিছু করতে পেরেছি কি না?

তুলনা করুন। তারপর কথা বলুন। আওয়ামী লীগের শাসনামলের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শাসনামলের তুলনা করে জনগণের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়গুলোও তিনি বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানিয়েছেন সবার প্রতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জানে যে তাদের আর কোনো ‘সম্ভাবনা নেই’, সে কারণেই তারা নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত করার চেষ্টা’ করছে। এখন অনেক নির্বাচন হচ্ছে। করোনার মধ্যেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছে।

যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সেই দলটির জন্মটা কোথায়? সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি এই দল (বিএনপি)। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।

ওই নির্বাচনে বিএনপি জিততে পারল না কেন? ’৭৫-পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর এবং পরবর্তী বিএনপির পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর মিলিয়ে এই ২৮ বছরে দেশের কী হয়েছে আর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ১৭ বছরে দেশ আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তার একটা তুলনামূলক বিচার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে হত্যা-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-গ্রেনেড হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে।

পাকিস্তানি কায়দায় দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। মুসলমান-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ নেই যারা ওই সময় নির্যাতনের শিকার হয়নি। এই দলকে (বিএনপি) দেশের জনগণ কেন ভোট দেবে? দেশের জনগণ কার কাছ থেকে কী পেয়েছে তার বিচার করেই ভোট দেবে।

জিয়ার আমলে নির্বিচারে হত্যার বিষয়ে তথ্য বের করা দরকার : ’৭৫-পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমানের আমলে ক্যু-পালটা ক্যুর নামে নির্বিচারে সামরিক বাহিনীর অফিসার-সদস্যদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা এবং গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তে কমিশন গঠনের দাবির বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-পরবর্তী ক্যু-পালটা ক্যুর নামে বিমানবাহিনীসহ সামরিক বাহিনীর অসংখ্য অফিসার-সদস্যকে বিভিন্ন কারাগারে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন কারাগারে খোঁজ নিলেই ওই সময়ে কত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, লাশ গুম করা হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া যাবে।

কমিশন গঠনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত বছর পর হলেও মানুষের মধ্যে চেতনা এসেছে। জেনারেল জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা এবং লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার বিএনপি কিন্তু করেনি।

কথিত বিদ্রোহের একটা বিচারের নামে ৯ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এটার অবশ্যই একটা তদন্ত হওয়া দরকার। বিমানবাহিনীসহ পুরো সামরিক বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্যকে জিয়ার আমলে হত্যা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, আরও জনমত গঠন হওয়া দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি ই-কমার্সে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চান একজন গণমাধ্যমকর্মী। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বসে নেই, সঙ্গে সঙ্গে এদের ধরা হয়েছে।

একবার যখন ধরা হয়েছে, তখন তারা টাকাগুলো নিয়ে কোথায় রাখল, কী করল, কী সম্পদ বানাল, সেটাও কিন্তু খুঁজে বের করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু করার আমরা কিন্তু সব করেছি।

এ ধরনের হায় হায় কোম্পানি যখন সৃষ্টি হয়, আপনাদের, সাংবাদিকদের একটা দায়িত্ব থাকে এ নিয়ে। সবার ওপরেই আপনাদের একটা শ্যেন দৃষ্টি থাকে। তাই সে ব্যাপারে আপনাদের মনে হয় একটা দায়িত্ব আছে।

যদি শুরুতেই আপনারা ধরিয়ে দিতে পারেন যে, এই কোম্পানিগুলো হায় হায় কোম্পানি বা এখানে প্রতারণা করছে বা এরা প্রতারক। অন্যদিকে মানুষও যদি একটু সতর্ক হয় তাহলে এ ধরনের সমস্যা কিন্তু হয় না।

জনগণের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে টাকাগুলো তারা নিয়ে নিয়েছে, তারা কোথায় টাকা রেখেছে, কোথায় পাচার হয়েছে- সেই ব্যাপারগুলোরও তদন্ত হচ্ছে। যখনই এগুলো পাওয়া যাবে, আমরা সেগুলো ফেরত দেব।

যেমন আমরা খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর টাকা ফেরত এনেছিলাম। সে পাচার করেছিল; কিছু টাকা হলেও ফেরত আনতে পেরেছিলাম। আরও এরকম বহু টাকা আছে আমরা ফেরত আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক সংস্থা আছে, যারা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বরাবরই ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সেই আগ্রহ দেখায় না।

বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার এই চাপে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা জাতিসংঘে তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি চলছে।

নারী পাচার, শিশু পাচার, সবচেয়ে বড় ড্রাগ- এই ড্রাগ পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা (রোহিঙ্গারা)। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, এটা সেখানে হচ্ছে, আরও হবে, যদি প্রত্যাবাসন না হয়।

নিজেরাই ভ্যাকসিন তৈরি করব : প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় যে মহামারি দেখা দিলে একটি শ্রেণি আর্থিক লাভ-লোকসানের দিকে যতটা তাকায়, মানুষের দিকে ততটা তাকায় না। কেবল আমাদের দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে।

এ কারণেই আমি ভ্যাকসিনকে সর্বজনীন একটি পণ্যে পরিণত করার পক্ষে কথা বলেছি, যেন এই ভ্যাকসিন সবাই পায়। তিনি বলেন, এখনো কিন্তু অনেক দেশ আছে যারা ভ্যাকসিন পায়নি।

অনেক দেশ এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পায়নি। এসব দেশের কথা আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলেছি। আমি বলেছি, সবার জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত। আমরা ১০ একর জায়গা নিয়ে রেখেছি।

গাভি (বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট) আছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি, আমরা ফর্মুলা চাই। আমরা ফর্মুলা পেলে দেশেই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে পারব।

সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিচ্ছে : শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিচ্ছে। তার জন্য প্রথমেই দরকার ফসল খেত থেকে তোলার পর তা সংরক্ষণ এবং কার্গোতে তুলে দেওয়া। তার জন্য কার্গো ভিলেজ করতে হবে। যেখানে বিভিন্ন চেম্বার থাকবে।

কোন ফসল, কোন তরকারিটা হবে, কোনটা কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালো থাকে- এগুলোর কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল আছে। আমি নেদারল্যান্ডসে দেখেছি, আমাদের দেশেও এটা করব।

খেত থেকে কার্গোতে নিয়ে আসার জন্য সে ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এখন আমরা কার্গো ভাড়া করে বিদেশে পাঠাই, কিন্তু আমাদের নিজস্ব কয়েকটা কার্গো দরকার।

করোনার সময় ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সবকিছু করেছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় যখন সবকিছু বন্ধ, তখন তো ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সবকিছু করেছি। প্রতিটি জেলায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি।

কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, এখানে চমৎকার সিস্টেম রয়েছে। এর মধ্যে আমি আমেরিকায় গিয়েও ডিজিটাল মাধ্যমে কনফারেন্স করলাম। সেখান থেকেও তো আমাদের এখানে সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনাদেরও তো এখন কষ্ট নেই। এখনই মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছেন, নিউজ হয়ে যাচ্ছে। কথা বলে রেকর্ড করে নিচ্ছেন, কারেকশন করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সময় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তালেবানের উত্থানে ভয়ের কিছু নেই : আফগানিস্তান ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, তালেবানের উত্থানে ভয়ের কিছু নেই। যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমরা রাখি।

আফগানিস্তানের বাতাস কোনোভাবেই যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে সেজন্য আমরা যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি। আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ধরে রেখে এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার পর আল কায়েদার উত্থান হলে বাংলাদেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তানে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

শেখ হাসিনা ওই সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, বহু লোক তখন সেখানে ট্রেনিং নিয়ে আসে, অর্থ-সম্পদ বানিয়ে নিয়ে আসে। আমরা কিন্তু সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিষয়গুলোকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। একটা দুটা ঘটনার পর অনেকে ভেবেছিল, আমরা তা সমাধান করতে পারব না।

কিন্তু আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

গৃহহীনদের ঘর : মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের দেওয়া ঘর প্রকল্পে অনিয়ম প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেড় লাখ ঘর (উপহার) দেওয়া হলো। এগুলোর সবই কি ভেঙে পড়েছে, নাকি কেউ ভেঙেছে।

আমরা নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছি। কিন্তু বাকিগুলোতে কোনো দুর্নীতি ছিল না। প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ঘরের ছবি দেখিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এগুলো কি অনিয়মের কারণে ভেঙেছে বলে মনে হয়? নাকি কেউ হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙেছে?

আপনারা বিষয়টি একটু ভালো করে দেখেন, খোঁজ নেন। আপনারা এটা খুঁজে বের করলেন না, কারা এটা ভাঙল। করোনাকালে ঘরগুলো তৈরির ফলে এত মানুষের কাজের সুযোগ হলো, সেটাও দেখলেন না। আমি কি জানতে পারি কেন আপনারা এটা দেখেননি?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার জন্য আমাদের ফান্ড আছে। বিশেষ ফান্ড আছে। তবুও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার জন্য অনীহা, আমি জানি না। তিনি জানান, অনেক শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করেন।

টাকার মোহে না পড়ে গবেষণায় মনোযোগী হতে পারেন। তবুও তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। গবেষণা হবে আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা হবে, হতে হবে। এই মুহূর্তে বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিষয়ে গুরুত্ব বেশি দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান এবং বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য এক সরকারি সফরে গত ১৯ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। পরে ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান শেষে ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় গণভবনপ্রান্তে সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠের সাবেক সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, বাংলাদেশ পোস্টের এডিটর ইন-চিফ শরীফ শাহাব উদ্দিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুয়ায়ুন, সমকাল সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট