চলমান কঠোর লকডাউনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে চেকপোস্ট পরিচালনা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ও ট্রাফিক ডিভিশন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব চেকপোস্টে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, রিকশা বা অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ির আরোহীদের গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি পুলিশের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলে যেতে দেওয়া হচ্ছে। যারা অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রবিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও, বনানী, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোতে চেকপোস্টে বের হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সকালের দিকে পুলিশি তৎপরতা কিছুটা বেশি ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টে ডিউটি করে যাচ্ছেন।
গত কয়েকদিন থেকে পুলিশি তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা ভাবছেন বিকালে নিরাপত্তা কিংবা তল্লাশিতে পুলিশ সদস্যরা থাকেন না, তারা ভুল করছেন। বাইরে বের হলেই পড়তে হচ্ছে জরিমানা কিংবা গ্রেফতার।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি ট্রাফিকের আটটি বিভাগ আছে। মতিঝিল, তেজগাঁও, ওয়ারী, মিরপুর, উত্তরা, গুলশান, রমনা ও লালবাগ— এই আটটি ট্রাফিক বিভাগকে দায়িত্ব বন্টন করে দিয়েছে ডিএমপি। সদর দফতরে সহায়তায় প্রয়োজনীয় ফোর্স নিয়ে লকডাউনকে কেন্দ্র করে চেকপোস্টগুলোতে ট্রাফিক সার্জেন্টের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে তারা। নিরাপত্তা এবং বাইরে বের হওয়ার বিষয়টি তদারকির জন্য সার্জেন্টরা চেকপোস্টের দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের মনিটরিংয়ের জন্য রয়েছেন ট্রাফিক ইনস্পেক্টর। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিরা তল্লাশির বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য যেকোনও সময় যেকোনও চেকপোস্ট পরিদর্শন করছেন। এতে করে পুলিশ সদস্যরাও আরও বেশি কাজের বিষয়ে সিনসিয়ার থাকছেন।
মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত শিফটিং করে বিভিন্ন সড়কে ডিউটি করছি। চেক পোস্টগুলোতে সবসময়ই পুলিশ সদস্যরা থাকছেন। তবে মাঝে মাঝে দেখা যায় চেক করতে গিয়ে গাড়ির জ্যাম লেগে যায়।’
তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট উজ্জ্বল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চেকপোস্টে দায়িত্ব এড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। প্রতিটি গাড়িকে আমরা তাদের গন্তব্য এবং বাইরে বের হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ডিউটি পালন করে যাচ্ছি।’ লকডাউনকে কেন্দ্র করে সরকারি নির্দেশনা মেনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার কথা বলেন তিনি।
১চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে গাড়ি
মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বিকাসুজ্জামান রনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চেকপোস্টগুলোতে সবসময় পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমান লকডাউন চলাকালীন চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন স্যারেরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়টি মনিটরিং করছেন। তারা নিজেরাও সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন।’
বিজয় সরণি মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট চন্দন সরকার বলেন, ‘অনেকে নানান অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছেন। আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চেকপোস্টগুলোতে ডিউটিরত অবস্থায় আছি। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অযৌক্তিক কারণ এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় বেশ কয়েকটি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শাহেদ আল মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ৬টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্রাইম ডিভিশনও চেকপোস্ট পরিচালনা করছে। মহাখালী থেকে ফার্মগেট আসার পথে জাহাঙ্গীর গেটে, আগারগাঁও হেলিপ্যাডের ওখানে, বিজিপ্রেস এলাকায়, সাতরাস্তার মোড়ে, নাবিল ক্রসিংয়ে, কলেজ গেটের সামনে নিরাপত্তা তল্লাশি পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা চেকপোস্ট পরিচালনা করছি। যে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বেশি করছে, সে রাস্তায় আমরা চেকপোস্ট পরিচালনা করছি।’
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গুলশান, বাড্ডা, বনানী এলাকায় ক্রাইম ডিভিশনের পক্ষ থেকে ২২টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ চেকপোস্ট পরিচালনা করছে। তবে আজ গাড়ির চাপ কিছুটা বেশি দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বেড়েছে।’