একের পর এক করোনার ঢেউয়ে থেমে গেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের ঢেউ। নিস্তব্ধ সৈকত। প্রতিবছর ঈদ ও সরকারি ছুটিতে সমুদ্রসৈকতে উপচেপড়া মানুষের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর ভিন্ন চিত্র। এবারের ঈদেও পর্যটকশূন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সৈকত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে জেলা শহরের বাইরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ কারণে কোনও পর্যটককে কক্সবাজারে আসতে দেয়নি প্রশাসন।
সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু করে সবখানে এখন শূন্যতা। পর্যটক না থাকায় সৈকতের দোকানপাট বন্ধ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটনশিল্পে জড়িতরা।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কক্সবাজারেও করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। একদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থানীয়দের মধ্যেও শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে পর্যটননগরী। বন্ধ রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস, তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট, বিপণিবিতান, সৈকত সংলগ্ন শপিংমল, সৈকতের কিটকট, ট্যুর অপারেটর কার্যক্রম, বিচ বাইকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
কক্সবাজার বিচ কিটকট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন পর্যটকশূন্য। সৈকতে সুনসান নীরবতা। তিন মাস ধরে কোনও পর্যটককে প্রবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন। কাজেই কিটকট ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। কিটকট মালিক-কর্মচারীসহ এক হাজার কর্মচারী তিন মাস ধরে বেকার। তাদের কোনও প্রকার আয়-রোজগার নেই। অনেকেই অর্থ সংকটে পড়েছেন। আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যটন বন্ধ থাকায় জেলার সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস কর্মরত এক লাখ শ্রমিক বেকার। ঈদের আনন্দ নেই কারও ঘরে।’
সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু করে সবখানে এখন শূন্যতা
সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু করে সবখানে এখন শূন্যতা
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (ট্যুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনও পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন কি-না আমার জানা নেই। করোনার এই পরিস্থিতিতে কোনও পর্যটকের কক্সবাজার আসা উচিত হবে না। আগে জীবন পরে পর্যটন।’
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, ‘করোনার কারণে জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটন আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কক্সবাজার পর্যটকশূন্য। হোটেল কর্মচারীরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন খরচের খাতা ভারী হলেও আয়ের খাতা শূন্য।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেলে কোথাও কোন ধরনের রুম বুকিং হয়নি। এবারের ঈদে কোনও পর্যটক কক্সবাজারে আসেনি। সবগুলো হোটেল-মোটেল ফাঁকা। শ্রমিকরা বেকার। তাদের ঈদ আনন্দ নেই।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনার সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সৈকত ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেননি পর্যটকরা। দূরের পর্যটকরা ঘুরতে আসেননি। আশপাশের কোনও পর্যটক যাতে সমুদ্রসৈকতে নামতে না পারেন ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কক্সবাজারে এখন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। একারণে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা নেই। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদন করবো