কক্সবাজার সাংস্কৃতি কেন্দ্রের বিপরীত পাশে কটেজ জোনের ৬টি কটেজে জমজমাটভাবে চলছে মাদক, জুয়া ও পতিতা ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির ইন্ধনে সেখানে চলছে মাদক ব্যবসার জমজমাট আসর। অনেক কটেজ আগের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ কর্মকান্ড। সিন্ডিকেটটি অনেক সময় পুলিশ প্রশাসন নাম ব্যবহার করে যাচ্ছে নিয়মিত। মাঝে মাঝে এসব অপরাধ বন্ধে জেলা পুলিশ অভিযান চালালেও থেমে নেই এসব কটেজের ভিতরে নানান অপকর্ম। এসব কটেজে রয়েছে চিহ্নিত মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীরাও। অনেক সময় অপরাধীরা এসব কটেজকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবেও ব্যবহার করে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও পতিতা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে আমির ড্রীম, সী-টাউন, নিউ সবুজ, মিম রির্সোট, জাহান কটেজ ও এসএস রির্সোট (সাবেক শারমিন কটেজ) এর ভাড়াটিয়ারা। অনেক ক্ষেত্রে মালিক নিজেই এসব কটেজে স্বইচ্ছা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরিমধ্যে আমির ড্রীম কটেজে মাদক ও পতিতা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে লালদীঘির পাড়া এলাকার রোস্তম নামের একব্যক্তি। তার নেতৃত্বে আমির ড্রীমে রয়েছে লাইট হাউজ এলাকার পান শাহিন ও ম্যানেজার বশর। কটেজ কক্ষে মাদকের হাট বসান পান শাহিন ও বশর। তাদের কটেজে রাখা হয় পতিতাও। চলমান কঠোর লকডাউনেও বন্ধ নেই তাদের এসব অপকর্ম। আমির ড্রীমে মাদক ব্যবসা ও পতিতার হাট বসানোর বিষয়ে ওই এলাকার সবাই অবগত রয়েছে। পান শাহিন ও বশর একনামে পরিচিত। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে তারা নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এসব অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া সী-টাউন কটেজ ভাড়াটিয়া হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে লাইট হাউজ এলাকার সিরাজ সওদাগর ও রমজান। আমির ড্রীমের মতো সেখানেও বসে মাদকের হাট। মজুদ রাখা হয় পতিতাও। নিউ সবুজ কটেজে জুয়া ও মাদকের হাট বসে দীর্ঘদিন ধরে। কটেজ কক্ষে মাদক সেবনের আড্ডাও জমে নিয়মিত। নিউ সবুজ কটেজ নিয়ন্ত্রণ করে পাহাড়তলী এলাকার আলোচিত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ভুলু (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) স্বজন নাছির। তার বাড়িও পাহাড়তলী এলাকায়। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবারের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। নিউ সবুজ কটেজকে তার নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেচে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের আগেও নাছির পলাতক ছিল। বর্তমানে সে জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ও পতিতা ব্যবসা। তার কটেজ নিয়মিত অপরাধীদের আড্ডা ও আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হয়। নিউ সবুজ কটেজের ম্যানেজার হিসেবে রয়েছে লাইট হাউজ এলাকার কালা মান্নান। মান্নান এসব লেনদেন ও মজুদের হিসেব রাখে নিয়মিত। এসব অপরাধকান্ডের অভিযোগে বেশ কয়েকবার অভিযানও হয়েছিল নিউ সবুজ কটেজে। সীলগালাও করা হয়েছিল কটেজটি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কটেজটি চালু করে ফের চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা কারবার ও পতিতা ব্যবসা। উক্ত সবুজ কটেজ মালিক বিশিষ্ট ইলেকট্রনিকস্ ও জায়গার ব্যবসায়ী সাজ্জাদ।
এসব অপরাধ থেকে পিছিয়ে নেয় মিম রির্সোট। কটেজটি চালান আব্বাস ও কালা জাহেদ। আব্বাসের বাড়ি গোমাতলী ও জাহেদের বাসা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকায়। তারা দুজন লাইট হাউজ এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে কটেজে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। সবচেয়ে বেশি পতিতা মজুদ রাখা হয় জাহান কটেজে। জাহান কটেজের বর্তমান ভাড়াটিয়া বাবু। চলমান কঠোর লকডাউনেও জাহান কটেজে রয়েছে পতিতাদের জমজমাট হাট। একটি কক্ষও খালী নেই জাহান কটেজের। প্রতি রুমে রাখা হয়েছে পতিতা। অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি কটেজ জাহান কটেজ থেকে নিয়মিত পতিতা সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে। জাহান কটেজের বিষয়ে পুরো কটেজ জোনের মালিক-কর্মচারীরা অবগত রয়েছে।
লাইট হাউজ এলাকার মাদক ও সন্ত্রীস হিসেবে বেশ পরিচিত রয়েছে আমিন ও সাইফুলের নাম। তারা ওই এলাকার আলোচিত ডাকাত নিহত নুরুল ইসলামের দুই ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাই ও ডাকাতি মামলাও রয়েছে। আমিন ও সাইফুল এই দুই সহোদয় চালান এসএম রির্সোট নামে একটি কটেজ। রির্সোটটি আগে শারমিন কটেজ হিসেবে পরিচিত ছিল। নাম পরিবর্তন করে শারমিন কটেজ থেকে এসএম রির্সোট করা হয়। এই দুই মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে চলে এসএম রির্সোটে ইয়াবা ব্যবসা। নিয়মিত চলে পতিতা ব্যবসাও। শারমিন কটেজেও অপকর্মের দায়ে বহুবার অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। অভিযানের পর ফের তারা মাদক ও পতিতা ব্যবসা চালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, পুরো কটেজ জোনে এই ৬টি কটেজে নিয়ন্ত্রণ করে মাদক ও পতিতা ব্যবসা। সবসময় জমজমাট থাকে এসব কটেজ। অপরাধীরাও এসব কটেজ নিজেদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে। নিয়মিত বসে মাদক সেবনের আড্ডাও। হায়রুল আমিন ও সাদেক ও রমজানের ইন্ধনে পুরো কটেজ জোনে চলে অপরাধ কর্মকান্ড। তারা নিয়মিত নেন মাসোহারাও। একসময় কাজী রাসেল নিয়ন্ত্রণ করত এসব কটেজ জোনের অপরাধ। বর্তমানে কাজী রাসেল এসব বিষয়ে রয়েছে চুপ। তার অবর্তমানে সাদেক, হায়রুল আমিন ও রমজানসহ কয়েকজন ব্যক্তি অঘোষিতভাবে এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কটেজ জোনের অপরাধ। কারা কখন কিভাবে বর্তমানে কটেজ জোনের মাদক ও পতিতা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বিষয়টি প্রকাশ্যে। এমনকি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অবগত রয়েছে বলে জানা গেছে। কটেজ জোনের নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা অনেক সময় পুলিশের সোর্স দাবী করে আদায় করে মাসোহারা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার কটেজ জোনে অভিযান চালানো হয়েছিল। মূলত চিহ্নিত কয়েকটি কটেজ এসব অপরাধের সাথে জড়িত। এছাড়া একটি সিন্ডিকেট এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। দ্রুত সময়ে সেখানে অভিযান চালানো হবে। একই সাথে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।