পাখি, ঝিলিক, খুশি, কিরণমালা- স্টার জলসা বা স্টার প্লাস কিংবা জি বাংলার এসব সিরিয়ালের নায়িকাদের নামের উপর চলা পোশাকের ব্যবসা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। আর এতে হিতে বিপরীত হয়েছে অনেক সময়।এসব পোশাককে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন বাংলাদেশি পোশাকের বাজার ধরা খেয়েছে, তেমনি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে অনেক বেশি। বিদেশি পোশাকের আগ্রাসনে ঘটেছে আত্মহত্যা-সংসার বিচ্ছেদের ঘটনাও।
সময়ের পালাবদলে আবারও আসছে ঈদের উৎসব। ঈদের ক্ষণ গণনা শুরু করেছেন দেশের উদ্যোক্তারা। তবে তাদের প্রশ্ন- এবারও কি পাখি ড্রেসগুলোর আগ্রাসন থাকবে নাকি বিদেশি এসব পোশাকের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে দেশের বাজার।
রোজার শুরু থেকেই চলে নতুন পোশাক বানানো বা কেনার প্রস্তুতি। ক্রেতাদের এমন চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দেশের বুটিক হাউজগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে নিজ নিজ ভাণ্ডার সাজানোর।
দেশীয় পণ্য তুলে ধরতে রাজধানীর বুটিক হাউজগুলোর আয়োজনে থাকে বৈচিত্রময় সব সম্ভার। নিজেদের তৈরি পোশাকে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তারা। সবারই ভিন্নতা ও নজর কাড়ার চেষ্টা।
ফ্যাশন ডিজাইনাররা রং ও তুলির সম্মিলনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে তারা রাত দিন কাজ করছেন।
এক কর্মী জানান, আগের যেখানে ৭ থেকে ৮ পিস পোশাক সেলাই করতে হতো, এখন সেখানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ পিস সেলাই করতে হয়। সকাল-বিকাল, দিন-রাত কাজ করছি, কাজের প্রচুর চাপ।
রং তুলি, রেশমি সুতার বুনন, জরি চুমকি আর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একে একে পোশাকগুলো করা তোলা হচ্ছে আকর্ষণীয়। এবারের ঈদে দেশীয় পোশাকের বুটিকস হাউসগুলো এনেছে কিছু নান্দনিক সংগ্রহ।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আমরা নতুন নতুন ডিজাইনে এবারের উৎসব ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গ্রাহকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, সে কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুত করছি। কিন্তু এই বাজারে যদি বিদেশি আগ্রাসন থামানো না যায়, তবে মনে হয় না তাতে খুব একটা লাভ পাবো।
আনুশা বুটিকসের এর সত্ত্বাধিকারী জায়েদা খাতুন জানান, গাউন টাইপস বা কুর্তি, শর্ট কুর্তি, লং কুর্তি, তাতে নানা রঙের ফুল; যাতে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই পোশাক প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিশ্বরং এর সত্ত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলছেন, যেহেতু ঈদ উৎসবটা গরমের মধ্যেই, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই পণ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে করে মানুষ আরাম পায়।
ক্রে ক্র্যাফটের মালিক খালিদ মাহমুদ বলেন, এই সময়টার বাস্তবতায় আমরা অফয়েড, লাল রঙ যেমন ব্যবহার করেছি, ঠিক তেমনি ডার্ক শেডের ব্ল্যাক, ব্লু রঙও ব্যবহার করেছি।
আর এ সংগ্রহের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন কমানোর চেষ্টা উদ্যোক্তাদের।
জায়েদা খাতুন বলেন, পাকিস্তানি-ভারতের কারণে আমাদের দেশীয় বাজার এমনিতে স্লো। পাকিস্তান-ভারতের থ্রি-পিস, শাড়িতে আজ বাংলাদেশি বাজার ছেয়ে গেছে।
খালিদ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের যে আইন ও ব্যবস্থাপনা আছে, যে ট্যাক্সেশন সিস্টেম আছে; সেটাকেই যদি ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হয়, তবে সেটা বাংলাদেশের বাজার বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন ঠেকাতে অনেকখানি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
এক্ষেত্রে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করার চেষ্টা করছে ফ্যাশন ডিজাইনাররা। একইসঙ্গে বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন বন্ধে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বুটিক হাউজের মালিকরা।