ঢাকাবুধবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

খুরুশকুল নতুন ব্রীজের পাশে ১০ একর জায়গায় জুড়ে বর্জ্যর পাহাড় গড়ে তুলেছে কক্সবাজার পৌরসভা।

প্রতিবেদক
সিএনএন ডেক্স

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫ ৯:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সিএনএন ডেক্স:

খুরুশকুল নতুন ব্রীজের পাশে ১০ একর জায়গায় জুড়ে বর্জ্যর পাহাড় গড়ে তুলেছে কক্সবাজার পৌরসভা।

কক্সবাজার পৌরসভার বদরমোকাম কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন খুরুশ্কুল সংযোগ সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে জনবসতি ও পর্যটন কেন্দ্র, বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। তবে এসবের মধ্যেই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল বর্জ্যের স্তূপ, যা এলাকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

কক্সবাজার পৌর এলাকার দৈনন্দিন সৃষ্ট বর্জ্য ফেলে এই ‘বর্জ্যের পাহাড়’ বানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এসব বর্জ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পের গল্প বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, এক সময়ের জীবন্ত বাঁকখালী নদীর বুকে বর্জ্য ফেলে ‘বর্জ্যের পাহাড়’ গড়েছে পৌরসভা। এতে একদিকে নদী ভরাটের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি এবং অন্যদিকে ময়লার জীবাণু ছড়িয়ে পুরো এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এক যুগের বেশি সময় ধরে কক্সবাজার শহরের বাসা-বাড়ির দৈনন্দিনসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটস্থ এই স্থানে ফেলে আসছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ক্রমান্বয়ে অন্তত ১০ একর জায়গাকে বর্জ্যের ভাগাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০ টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এসব বর্জ্যের সবগুলোই ফেলা হচ্ছে কস্তুরাঘাস্থ ওই এলাকায়। প্রতিদিন সাতটি ডাম্পার গাড়ি দিয়ে পুরো পৌর এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয় বর্জ্যগুলো।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ১০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে এই বর্জ্যের পাহাড়। সেখানে সকাল থেকে বিকাল দুপুর পর্যন্ত পৌরসভার একাধিক ডাম্পার গাড়ি এসে বর্জ্য ফেলে যাচ্ছে। এসব বর্জ্য স্কেভেটর দিয়ে নিচ থেকে উপরে চূড়ায় তোলা হচ্ছে। সুউচ্চ পাহাড় হয়ে যাওয়ায় পাশের খালি জায়গায় নতুন করে স্তূপ করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ সচেতন লোকজন বলছেন, যেভাবে বছরের পর বছর জনবসতির কাছে বর্জ্য ফেলে রাখা হচ্ছে তাতে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। দুর্গন্ধে বিঘ্ন হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনযাপনে।

স্থানীয় বাসিন্দা এড. মো. ইউসুফ বলেন, ‘এই বর্জ্যের পাহাড় থেকে একটি আলাদা উষ্ণতা বের হয়। তা ছড়িয়ে পড়ে দীর্ঘ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে উঠেছে; এটা স্পষ্ট অনুভব করা যায়।’

এ প্রসঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রন্টমেন্ট পিপলস’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘লাখ লাখ টন বর্জ্যে জমে আছে। বছরের পর বছর থাকলেও অধিকাংশ বর্জ্য পঁচছে না। এতে পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্জ্য থেকে সৃষ্ট জীবাণুতে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। শুধু ওই এলাকা নয়; পুরো পৌর এলাকার পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি করছে এসব বর্জ্য।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), কক্সবাজার শহর শাখার সভাপতি ইরফান উল হাসান বলেন, ‘পৌর শহরে আবাসন বাড়লেও অদৃশ্য কারণে বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। এভাবে লোকালয়ে বর্জ্য ফেলার নজির বিশ্বের কোথাও নেই। আবর্জনার স্তূপ থেকে বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাস মানুষের দেহে প্রবেশের ফলে হার্ট, ফুসফুস ও যকৃৎ আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া স্থায়ীভাবে ইনফেকশনও হতে পারে যা মরণব্যাধি ক্যান্সারে রূপান্তর হতে পারে। সুতরাং পর্যাপ্ত পরিমাণ সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।’

জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নের এসএম পাড়ায় বর্জ্য সংরক্ষণের একটি ডাম্পিং স্টেশনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অধিগ্রহণ শেষ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সেই ডাম্পিং স্টেশন প্রস্তুত হতে কম হলেও দুই বছর লাগবে।

সম্পর্কিত পোস্ট