কক্সবাজারের চকরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মো. নাছির উদ্দিন নোবেল (৪২) নামে এক তরুণ আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৯ জন।
তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের মুবিনপাড়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত নোবেল পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদ ছাত্রলীগের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন- মুবিনপাড়ার আজিজুল হক (৫০), আবু তাহেরের ছেলে মিজানুর রহমান (৩১), ওমর মিয়ার ছেলে ছরওয়ার হোসেন (৪২), আকবর আহমদের ছেলে আবুল কালাম ইয়াছিন(২১), সিরাজ মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন (৩৫), আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ শফি (৩৮), নুরুল কাদের (৪৩), জাফর আলম (৫০) ও মনু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ জাহেদ (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবার সূত্র জানায়, দুপুরে নোবেল তার লোকজন নিয়ে জমিতে চারা রোপণ করছিলেন।
এ সময় পার্শ্ববর্তী দুই নম্বর ওয়ার্ডের এনামুল বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০-১২ জন সন্ত্রাসীকে নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। খুব কাছ থেকে নোবেল ও তার লোকজনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে নোবেল ও তারে লোকজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে চারিদিক থেকে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নোবেলকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ফাহিম আহমদ ফয়সাল বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে একসঙ্গে ১০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এর মধ্যে নোবেলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকি ৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও তরুণ নেতা হিসেবে নোবেল এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ছোটকাল থেকেই নোবেল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি।
ওই নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী একজনকে তাদের অভিযোগ, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সময় দিয়ে আসছিলেন নোবেল। তাই জমির বিরোধকে কাজে লাগিয়ে পথের কাঁটা হিসেবে তাকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
তাদের দাবি, নোবেলের ওপর যারা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী।
নিহত নোবেলের শ্বশুর ও চাচা আজিজুল হক আবু অভিযোগ করেছেন, বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশ করে রাতারাতি আওয়ামী লীগ নেতা বনে যাওয়া খলিল উল্লাহ চৌধুরীর পরিকল্পনাতেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর আগেও নোবেলকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল খলিল। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের একাধিক দল সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত এজাহার পেলে মামলা রুজু করা হবে।