রেশন প্রদানে নতুন ও পুরোনো রোহিঙ্গাদের সমান মূল্যায়নে মর্যাদাহানির দাবি তুলে বিক্ষোভের চেষ্টা চালিয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার (নিবন্ধিত) ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা।
রোববার (১ আগস্ট) সকালে তারা বিক্ষোভের চেষ্টা চালান। এসময় তাদের বিক্ষিপ্তভাবে ছোড়া ইটপাটকেলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১০-১২ সদস্য আহত হয়েছেন। নিজেদের সম্পদ রক্ষায় ফাঁকা গুলি চালিয়েছে এপিবিএন সদস্যরা। এতে আহত হয়েছেন কয়েক রোহিঙ্গাও। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ইস্যু করা ফুড কার্ড ও তাদের আগে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি ফুড কার্ডের ধরন হুবহু এক হওয়ায় একে মর্যাদাহানি দাবি করে রেশন নেয়া বন্ধ রেখেছেন পুরাতন রোহিঙ্গারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে কয়েক লাখ প্রত্যাবাসন হয়। কিন্তু হঠাৎ স্থগিত হওয়া প্রত্যাবাসনে প্রায় ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আটকা পড়ে। পরে নিবন্ধিত এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে ২২ হাজার জনকে টেকনাফের নয়াপাড়া ও বাকি ১২ হাজার জনকে কুতুপালং ক্যাম্প করে রাখা হয়। এরা তখন থেকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তত্ত্বাবধানে জীবন রক্ষাকারী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন তারা।
কিন্তু ২০১৭ সঙ্গে জাতিগত সহিংসতায় নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে বিছিন্নভাবে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে উখিয়া-টেকনাফ এবং পুরো জেলায় অবস্থান নেয়। সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় এনে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি ক্যাম্প করে রাখা হয়েছে। তাদের জীবিকায়নে ইউএনএইচসিআর ফুড কার্ড তৈরি করে। এ কার্ডের বিপরীতে জনপ্রতি ৯শ টাকা ও অন্যান্য আহার্য্য পণ্য পেয়ে থাকেন।
কিন্তু সম্প্রতি পুরোনো নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা জানতে পারেন তাদের ও নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি ফুড কার্ডের রঙ ও ধরন একই। এটাকে তারা তাদের ‘মর্যাদাহানি’ বলে মনে করে হুবহু কার্ড নিয়ে জুলাই মাসের রেশন উত্তোলন করেনি নয়াপাড়া ক্যাম্পে ১৯৯১-৯২ সালে আসা পুরাতন রোহিঙ্গারা।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, নতুন রোহিঙ্গাদের ফুড কার্ড এবং পুরাতন রোহিঙ্গাদের ফুড কার্ড একইরকম হওয়াতে নিবন্ধিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মর্যাদাহানি হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কিন্তু শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) এবং জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) কর্তৃপক্ষ ফুড কার্ড ইস্যুতে গৃহীত সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
টেকনাফ নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড (ক্যাম্প-২৫) ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) উপসচিব মো. আবদুল হান্নান জানান, হয়তো ভুল ধারণা থেকে তারা এমনটি করছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, তারা রেশন নেয়া শুরু করবে।
কক্সবাজার ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, ফুড কার্ডকে কেন্দ্র করে রোববার ভোর থেকে নয়াপাড়া ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা নারীরা জড়ো হতে থাকেন। এপিবিএন সদস্যরা সর্বোচ্চ ধৈর্য সহকারে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তারা দফায় দফায় বিভিন্ন স্পটে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এভাবে দুপুর পর্যন্ত রোহিঙ্গা নারীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশের অস্ত্র টানাহেঁচড়া শুরু করলে পুলিশ জানমাল রক্ষায় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। এতে রোহিঙ্গা নারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যান। ইট-পাটকেলের আঘাতে এপিবিএনের ১০-১২ সদস্য আহত হয়েছেন।