তারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। আবার তা একই বিষয়ে। চাকরিও নিয়েছিলেন তারা বিচার বিভাগে। গাটছাড়াও বেঁধেছিলেন পরিবারের সম্মতিতে। তাদের শেষ কর্মস্থল ছিল একই জায়গায়। এমনকি তারা সেখানে একই বেঞ্চে পালা করে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। তারা একই সময় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিচারক স্বামী ফিরলেন করোনাজয় করে। আর সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হেরে গেলেন করোনার কাছে। একমাত্র করোনাই তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করল।
করোনাযুদ্ধে এই হেরে যাওয়া বিচারক হলেন- সানিয়া আক্তার। তিনি ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সানিয়া আক্তার। তাঁর স্বামী কে এইচ এম ইমরানুর রহমান। তিনিও ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন।
সানিয়ার লাশ যখন করোনা ওয়ার্ড থেকে ফ্রিজ ভ্যানে তোলা হচ্ছিল, তখন বিচারক স্বামীর আবেগঘন কান্নায় গোটা এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। যখন ভ্যানে লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন স্বামী লাশবাহী ভ্যানের পেছন পেছন দৌড়ে ছুটছিলেন। পাশে থাকা স্বজন আর সহকর্মীরা তাকে সান্তনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছিল।
পারিবারিক সূত্র বলছে, গত ১২ জুলাই ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে স্বামী-স্ত্রী র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য নমুনা দেন। তারা দুজনেই করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ১২ জুলাই সানিয়া আক্তারকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৬ জুলাই তাঁকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়।
শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, সানিয়া আক্তার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সানিয়া আক্তারের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল কম। তাঁর প্রচুর শ্বাসকষ্ট ছিল। হাই-ফ্লো নেজাল ক্যানোলা দিয়ে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বুধবার সকাল বেলা ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
সানিয়া আক্তারের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী কে এইচ এম ইমরানুর রহমান একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৭ সালে তিনি বিচার বিভাগে যোগদান করেন। তার পরের বছর ২০১৮ সালে ১ মার্চ বাংলাদেশ বিচার বিভাগে যোগদান করেন সানিয়া আক্তার। দুই বছর ছয় মাস আগে তারা পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এদিকে বিচারক সানিয়া আক্তারের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গভীর শোক প্রকাশ করছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।