বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে ‘কঠোর লকডাউন’। যা বলবত থাকবে পরবর্তী ৭ দিন। এমন সুপারিশ সম্বলিত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সাধারণ মানুষকে এবারের লকডাউন মানানো যাবে তো? নাকি গত বছরখানেক যাবত চলা গতানুগতিক ঢিলেঢালা লকডাউনই চলবে? করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর থেকে জারি করা সরকারের বিধিনিষেধ হোক আর লকডাউন হোক জনসাধারণ তা মানেনি। এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন বা সরকারি আদেশ নিষেধের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেনি সাধারণ মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হওয়ার চেষ্টা করেও জনগণকে মানাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার গতানুগতিক নয়, কঠোরভাবেই লকডাউন পালনের বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কারণ অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এমন অবস্থায় মানুষের অকাল মৃত্যু ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের বিকল্প দেখছে না সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউন মানাতে পুলিশের পাশাপাশি এবার বিজিবি ও সেনাবাহিনীও থাকবে। তারা কঠোর মনোভাব নিয়েই রাস্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। গাড়ি, রিকশা, ভ্যান, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ থাকবে। বিমানের বিষয়টি প্রজ্ঞাপনে জানা যাবে। দোকানপাট, শপিং মল খুলতে দেওয়া হবে না। অকারণে মানুষজন রাস্তায় বের হতে দেওয়া হবে না। কেউ বের হলে তাদের জেলে যেতে হবে বলেও জানিয়েছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে সরকারি প্রজ্ঞাপনে কঠোর বিধিনিষেধ বলা হলেও শুক্রবার প্রধান তথ্য কর্মকর্তার বরাতে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হয়েছে ‘কঠোর লকডাউন’। তাতে জানানো হয়েছে, জরুরি পরিসেবা ছাড়া এবার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এমনকি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জানানো হয় লকডাউন নিশ্চিত করতে এবার মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি।
এর আগে চলমান বিধিনিষেধে দেখা গেছে, নানা অজুহাতে দোকানপাট খুলেছে। বাস, লঞ্চ চলেছে। সড়কের চেকপোস্ট এড়িয়ে মানুষ যাতায়াত করেছে নৌপথে। সর্বশেষ করোনা থেকে রাজধানীকে বাঁচাতে ৭ জেলায় লকডাউন দিলেও মানুষ রাজধানীতে এসেছেন নানা উপায়ে। কখনও পায়ে হেঁটে। আবার কখনও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে।
কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালীন শপিং মল খুলেছে। রাত ৮টার পরিবর্তে এসব দোকানপাট আর শপিং মল খোলা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে। মুখে মাস্কের বালাই নাই। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কথা তো অনেকেই ভুলে গেছে বহু আগে। ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস লঞ্চ চলার কথা থাকলেও ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিয়েও গাড়ি-লঞ্চ ভরাট করে চলেছে। কেউ কারও কথা শোনেনি, শোনানো যায়নি। এ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও পুলিশ ছিল অসহায়।
প্রয়োজনের কথা বলে ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে। এ সুযোগে খোলা রাখা হয়েছে শেয়ার বাজারসহ অনেক কিছু। সরকারি ভাষায় এটিকে ‘চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ’ উল্লেখ করে ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু এসব দফা রয়ে গেছে বাস্তবায়নহীন।
যদিও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রতি জেলার জেলা প্রশাসক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। মাঠ পর্যায়ে তিনি সরকারের প্রতিনিধি। স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যনসহ জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক। আদেশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক যা ভালো মনে করবেন তিনি তাই করবেন। তারপরও প্রতিটি জেলায় এসব কাজ কঠোর তদারকির জন্য একজন করে সিনিয়র সচিব বা সচিবকে যুক্ত করা হয়েছিল। তিনি জেলা প্রশাসককে সহায়তা করবেন। কিন্তু তার পরেও লকডাউন সফলতার মুখ দেখেনি। কাগজ-কলমের কঠোর বিধিনিষেধ পালিত হয়েছে ঢিলেঢালাভাবেই।
তবে এবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি বিশেষ ফোর্স হিসেবে বিজিবি এবং সোনাবাহিনীও এবার যুক্ত হবে। এবারের কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সরকারকে দেশব্যাপী ১৪ দিনের জন্য ‘শাটডাউন’ করার পরামর্শ দেয় করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি (এনটিএসি)। এরপর শুক্রবার রাতে তথ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকারের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, কঠোর লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবল অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। লকডাউনের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না। তবে গণমাধ্যম এর আওতার বাইরে থাকবে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত প্রজ্ঞাপন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অবিলম্বে জারি করা হবে বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়