ঢাকাশুক্রবার , ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সন্তানদের নজরদারিতে রাখুন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ

প্রতিবেদক
সিএনএ ডেক্স

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২ ৯:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সিএনএ ডেক্স:

সন্তানদের নজরদারিতে রাখা জরুরি : অতি. জেলা ও
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, সন্তান পিতা-মাতার অমূল্য সম্পদ, মহান সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত অসীম নেয়ামত। সকল অভিভাবকদের উচিত তাদের উঠতি বয়সী সন্তানদের চলাফেরা, আচার আচরণ, সঙ্গ নেওয়া, পড়াশোনা, অভ্যাস সব বিষয়ে সচেতনার সাথে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা। নাহয়, সন্তানদের ব্যাপারে অভিবাবকেরা উদাসীনতা প্রদর্শন করলে, সন্তানেরা বিপদগামী হওয়ার সমুহ আশংকা রয়েছে। যে বয়সে অপরাধ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা থাকেনা, সে বয়সে শিশু ও কিশোর অপরাধে অনেকেই সম্পৃক্ত হচ্ছে। আইনের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা মোটেও কাম্য নয়। সামাজিক অবক্ষয় রোধ, শিশু ও কিশোর অপরাধ থেকে সন্তানদের দুরে রাখতে অভিভাবকদের এ গুরু দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সন্তানেরা বিপদগামী হওয়ার খবর পেলেই তাদের দ্রুত যথাযথ সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এজন্য অভিভাবকদের সন্তানদের পেছনে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত। যা শিষ্টাচার ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ, পরিশুদ্ধ গঠনে সহায়ক হয়।

মেহেদী হাসান নামক একজন নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রকে হত্যার রায় ঘোষনা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার ১০ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন রায়ের পর্যবেক্ষনে এসব কথা বলেন।

এ মামলায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হচ্ছে-মোঃ ফারুক প্রকাশ ওমর ফারুক (২০), পিতা-ফরিদ আহমদ, শাহেদ (২২), পিতা-আবুল বশর, মিটু (২২), পিতা-জহির আহমদ, ওয়াসিম (২৫), আমির হোসেন এবং সাগর, পিতা-তৈয়বুর রহমান। তাদের সকলের বাড়ি কক্সবাজার শহরের বাহারছরা ও মধ্যম বাহারছরায়। এদের ৩ জন খুন হওয়া মেহেদী হাসান এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী রাত ১০ টার দিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বেঞ্চ সহকারী ও শহরের বাহারছরার ‘আরজু ম্যানশন’ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলাইমানের পুত্র কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র, ক্ষুদে বিজ্ঞানী, অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন মেহেদী হাসান (১৯)-কে তার বন্ধু শাহেদ কক্সবাজার শহরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ডেকে আনে। সেখানে রাস্তার উপর বিভিন্ন ঘটনার জের ধরে মেহেদী হাসানকে ৫ জন মিলে ডেকোরেশনের বাঁশ দিয়ে দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে

এঘটনায় নিহত মেহেদী হাসান এর পিতা মোহাম্মদ সোলাইমান বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ৫৪/২০১০ ইংরেজি। জিআর নম্বর : ২৭৯/২০১০ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর : ৬১০/২০১১ ইংরেজি। পরে বাদী মোহাম্মদ সোলাইমান তার পুত্র হারানোর শোকে মৃত্যুবরন করায় মামলায় আর সাক্ষ্য দিতে পারেননি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন রায়ের পর্যবেক্ষনে আরো বলেন, মামলার সাক্ষ্য, প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী ফৌজদারি দন্ডবিধির ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত সকল আসামী ফাঁসির আদেশ অথবা আমৃত্যু কারাদন্ডাদেশ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু আসামীদের কম বয়স বিবেচনায়, সকলে কিশোর হওয়ায় উক্ত ধারা সমুহের অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তি হিসাবে আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন পর্যবেক্ষনে আরো বলেন, মেহেদী হাসান হত্যার আগে তাদের অভিভাবকেরা সন্তানদের রাতে বাড়ি থেকে বের হতে নাদিলে, রাতে বাড়ি থেকে কেন বের হচ্ছে-তা জানতে চেয়ে কড়া নজরদারি করলে, এ হত্যাকান্ড হয়ত সংঘটিত হতো না। অথচ এ ঘটনার পর নিহত মেহেদী হাসান এর পিতা মোহাম্মদ সোলাইমানও অনেকটা পুত্র হারানোর শোকে মৃত্যুবরন করেছেন। যা নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক।

এ মামলার রায়ে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন আরো কিছু ব্যতিক্রমী আদেশ দিয়েছেন। তারমধ্যে একটি আদেশ হলো : যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত ৫ জন আসামীর প্রত্যেককে ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থ দন্ড দেওয়া হয়। অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে অতিরিক্ত আরো ৩ বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।দন্ডিত অর্থ আদায়ের পর তার থেকে ১০ হাজার টাকা সকল পর্যায়ের আদালতের বিচার কার্যক্রমের খরচ বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে রায়ে আদেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন। অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ অর্থাৎ ২৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নিহতের ক্ষতিপূরণ বাবদ নিহত মেহেদী হাসান এর মাতা রোজিনা আক্তারকে পরিশোধ করতে রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। The code of criminal procedure 1898 এর 545 (1)(b) ধারা অনুযায়ী এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী জানান, নিহত মেধাবী মেহেদী হাসান ছিলেন একজন ক্ষুদে বিজ্ঞানী। তার আবিস্কৃত ‘অটো ডাস্ট ক্লিনার’, ‘বৈদ্যুতিক চুরি’ ঢাকাস্থ আগারগাঁও জাতীয় জাদুঘরে এবং ‘সিকিউরিটি লক’ শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরে স্থান পেয়েছে। এছাড়া মেহেদী হাসান এর অনেক আবিস্কার দেশের বিজ্ঞান বিষয়ক জাতীয় ম্যাগাজিন এ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে, এ রায়কে একটি দৃষ্টান্তমূলক, যুগান্তকারী ও চমৎকার রায় হিসাবে উল্লেখ করে একজন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ প্রবীণ আইনজীবী সিবিএন-কে বলেছেন-বিজ্ঞ বিচারকদের এ ধরনের মানবিক ও দুরদর্শীতামূলক রায় রাষ্ট্র ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অভিবাবকেরা সচেতন হবে, সমাজে পরিবর্তন আসবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন- উক্ত সিনিয়র আইনজীবী।

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সূত্র: cbn

সম্পর্কিত পোস্ট