গাজীপুরে জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। পাওনা মাত্র আড়াই হাজার টাকা না পেয়ে দুই সহকর্মীকে খুন করেছে এক বেকারি শ্রমিক। এ ঘটনায় জড়িত মূল আসামিসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। লাশ উদ্ধারের চার দিন পর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। রবিবার (১১ জুলাই) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ, উত্তর) জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহতরা হলেন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান (২০) ও নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সাতনাই কলোনি এলাকার আলম মিয়ার ছেলে রাকিব হোসেন (১৮)। তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি থানার আমবাগ এলাকার শাহানা বেকারির কর্মচারী।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কিসমত দুর্গাপুর মধ্যপাড়া এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে রাসেল প্রধান (২৫), বগুড়ার ধুনট উপজেলার শৈলমারী গ্রামের সাইদুর সরকারের ছেলে মো. সৈকত সরকার (২৪)।
জাকির হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ৭ জুলাই রাতে কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ নামাপাড়া বাঘিয়ারচরে আবুল কালামের পরিত্যক্ত ইটভাটা এলাকায় কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখা পানিতে ভাসমান অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে কোনাবাড়ী থানার পুলিশ। এ ঘটনায় ওই থানার এসআই তাপস কুমার ওঝা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযানে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে সৈকত সরকারকে (২৪) শনিবার কালিয়াকৈর থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জোড়া খুনের প্রধান হোতা রাসেলকে (২৫) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে একই দিন রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত সীমানা পিলার ও মাহমুদুলের প্যান্ট বিলের পানি থেকে উদ্ধার করা হয়। রবিবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমবাগ এলাকার শাহানা বেকারিতে কাজ করতো রাসেল প্রধান (২৫), মাহমুদুল হাসান (২০) ও রাকিব হোসেন (১৮)। একসঙ্গে কাজ করায় তাদের বন্ধুত্ব হয়। প্রায় মাস খানেক আগে রাসেলের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা ধার নেয় মাহমুদুল হাসান। পাওনা টাকা আদায়ের আগেই স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় রাসেল। কিছু দিন ধরে মোবাইল ফোনে রাসেল পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে টালবাহানা করতে থাকে মাহমুদুল। একপর্যায়ে রাসেলের মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে রাখে মাহমুদুল। এতে ক্ষুব্ধ হয় রাসেল। গত ১ জুলাই রাসেল প্রধান পাওনা টাকার জন্য গাইবান্ধা থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে আসে। দু’দিন খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি রাসেল। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ রাসেল সহকর্মী রাকিব হোসেনের (১৮) মাধ্যমে মাহমুদুলের সন্ধান পায়। ক্ষুব্ধ রাসেল পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহমুদুল ও রাকিবের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গভীর করে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ জুলাই সন্ধ্যায় আমবাগ নামাপাড়া বাঘিয়ারচরে বিলের পাড়ে আবুল কালামের পরিত্যক্ত ইটভাটা এলাকায় মাহমুদুল ও রাকিবের সঙ্গে রাসেল আড্ডা দিতে থাকে। এ সময় জাদুর মাধ্যমে টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে রাসেল প্রথমে রাকিবের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে মাহমুদুলের দু’হাত বাঁধার পর দু’পা বাঁধার সময় তার সন্দেহ হয়। এ সময় বাধা দিলে মাহমুদুলকে টেনেহিঁচড়ে বিলের পানিতে নিয়ে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রাসেল। টানাহেঁচড়ার সময় মাহমুদুলের প্যান্ট খুলে গেলে তা বিলের পানিতে ফেলে দেয় রাসেল। হাত-পা বাঁধা রাকিবের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। রাকিব এ ঘটনা তার কারখানা মালিকসহ সবাইকে বলে দেওয়ার কথা জানায়। এ সময় একটি সীমানা পিলার (খুঁটি) দিয়ে মাথায়, বুক ও পিঠে আঘাত করে রাকিবকে খুন করে রাসেল। পরে সেখানেই পানিতে ডুবিয়ে লাশের ওপর কচুরিপানা, ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখে নিহতদের পকেট থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও ২শ’ টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় রাসেল। পরদিন সকালে সে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড় এলাকার একটি ভাতের হোটেলের মালিকের ছেলে সৈকতের কাছে এক হাজার চারশ’ টাকায় একটি মোবাইল ফোন (মাহমুদুল হাসানের) বিক্রি করে গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়ি চলে যায়। রাসেলের কাছ থেকে নিহত রাকিবের এবং সৈকতের কাছ থেকে নিহত মাহমুদুলের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।