চট্টগ্রামে বাসায় বসে অবৈধভাবে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার দুই যুবককে এক দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালত তাদের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন।
চট্টগ্রামের খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাসায় বসে টিকা দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
রিমান্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- বাসায় করোনার টিকা গ্রহণকারী মো. হাসান ও সহায়তাকারী মোবারক আলী। মোবারক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে চাকরি করতেন। হাসান তার বন্ধু।
গত শনিবার (৭ আগস্ট) নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডে একটি বাসায় বেআইনিভাবে ভ্যাকসিন নেওয়ার এই ঘটনা ঘটে। পরদিন রবিবার (৮ আগস্ট) ঘরে বসে টিকা নেওয়ার ছবিসহ সহযোগিতাকারীকে ধন্যবাদ দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন মো. হাসান নামের ওই যুবক। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অশেষ ধন্যবাদ বন্ধু মো. মোবারক আলীকে, কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে সহায়তা করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ মডার্নার প্রথম ডোজ সম্পন্ন।’
তার পোস্টটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে হাসান পোস্টটি ডিলিট করে দেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে খুলশী থানা পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (৯ জুলাই) দুপুরে টিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া তার বন্ধু মোবারক আলীকে আটক করে পুলিশ।
এরপর সোমবার বিকালে আটক দুইজনসহ এই ঘটনায় জড়িত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সিটি করপোরেশনের জোনাল কর্মকর্তা তপন কুমার চক্রবর্তী। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুইজনকে সোমবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। অন্যদিকে, ছবি দেখে চসিকের স্বাস্থ্যকর্মী বিষু দে-কে শনাক্ত করে সংস্থাটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
সেদিন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘ঘরে বসে টিকা গ্রহণের ঘটনায় চসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তপন কুমার চক্রবর্তী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় আটক দুইজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর আমরা আটক দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছি। অপর দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
মামলার চার আসামি হলেন- মো. হাসান, মোবারক আলী, সাজ্জাদ ও বিষু দে। এদের মধ্যে বিষু দে চসিকের মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। ভাইরাল হওয়া ছবিতে তাকে করোনা টিকা পুশ করতে দেখা গেছে। মামলার এজাহারে সরকারি ভ্যাকসিন আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ এনে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯, ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে বলা হয়, মোবারক আলী তার পূর্বপরিচিত বিষুকে বাসায় নিয়ে অবৈধভাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ঠিক করেন। প্রতি ডোজ এক হাজার টাকার বিনিময়ে বিষু নগরীর জাকির হোসেন রোডে মোবারক আলীর বাসায় গিয়ে হাসান ও সাজ্জাদকে ভ্যাকসিন প্রদান করেন।