বগুড়ার শাজাহানপুরে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মোস্তফা রাশেদকে (৫০) অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে তার বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ (২৫) এবং ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার মাঝিড়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিকালে রাশেদ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, মামলার পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন– মোস্তফা রাশেদের বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ, তার সহযোগী রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার বালিয়াপুকুর গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের ছেলে মোসাদ্দেকুর রহমান (৩৬), একই উপজেলার কয়েরদারা বিলপাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আবদুস সাত্তার (৩৬), কাশিয়াডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে মো. অলি (৪২), পাবনা সদর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে নোমান আরাফাত (২৫), একই উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের শহীদ আলীর ছেলে আজিজুর রহমান সুমন (৪৪) এবং লস্করপুর গ্রামের রেহেজ শেখের ছেলে ড্রাইভার মানিক শেখ (৩২)।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পোড়াপাইকর গ্রামের মৃত আবেদ আলী প্রামাণিকের ছেলে মোস্তফা রাশেদ গত ২০১৫ সালে সেনা সার্জেন্ট পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি ছাড়াও শাজাহানপুরের মাঝিড়াপাড়ায় তিন শতক জমির ওপর বাড়ি আছে। অবসরে যাওয়ার পর তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে গ্রামে বসবাস করতেন। মাঝিড়াপাড়ার বাড়ি ভাড়া দেওয়া ছিল। গত প্রায় দু বছর আগে এ সম্পত্তি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে তিনি গত দু মাস ধরে মাঝিড়াপাড়ার বাড়িতে একা বসবাস করছেন। অপর তিন কক্ষে ভাড়াটিয়া আছে। তিনি সিএনজি চালিয়ে, বাড়িভাড়া ও পেনশনের টাকা জমিয়ে প্রতিমাসে স্ত্রী ও সন্তানদের পাঠাতেন। এদিকে, বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার বাবাকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ ছয় সহযোগীকে নিয়ে রাশেদের ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেন এবং তাদের সঙ্গে থানায় যেতে বলেন। রাশেদ রাজি না হলে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে কোলে তুলে মাঝিড়া বাজারের কাছে রাস্তায় নিয়ে যান। সেখানে রাখা তাদের মাইক্রোবাসে তোলার চেষ্টা করা হয়। মাইক্রোবাস স্টার্ট দেওয়ার সময় তার বাড়ির ভাড়াটিয়ারা টের পেয়ে সেখানে যান এবং পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে শাজাহানপুর থানার পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মোস্তফা রাশেদকে উদ্ধার করেন। এ সময় মাইক্রোবাসসহ অপহরণের চেষ্টায় জড়িত ছেলেসহ সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে মোস্তফা রাশেদের স্ত্রী আনিসা বেগম দাবি করেছেন, তার স্বামী একজন মানসিক রোগী। বড় ছেলে তাকে পাবনার মাসুমবাজারে আলোর পথ মানসিক/মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারী ছিলেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আলভী আদনান দাবি করেন, রোগী নিতে এসে তার লোকজন ফেঁসে গেছেন।
তবে শাজাহানপুর থানার ওসি বলেন, ‘সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে সাবেক সেনা সার্জেন্ট মোস্তফা রাশেদকে হাত-পা বেঁধে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। মাইক্রোবাস জব্দ ও তার ছেলেসহ সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মোস্তফা রাশেদ থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’