জসিম সিদ্দিকী:কক্সবাজারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে সম্পন্ন হয়েছে। ১৯ অক্টোবর সৈকতের মুক্তমঞ্চে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত কক্সবাজার পৌরসভার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশের সভাপতিত্বে প্রতিমা বির্সজন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, পুলিশ এবিএম মাসুদ হোসেন, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
আলোচনা সভা শেষে, সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ধারাবাহিকভাবে প্রায় দু’শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন করেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে। এ সময় আরতী, ঢোলক বাদ্যর তালে তালে মা দুর্গা কি জয় এই শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে কক্সবাজার জেলা ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঢাকঢোল বাজিয়ে, সংগীতের মুর্ছনায় নেচে-গেয়ে প্রতিমা নিয়ে উপস্থিত হন। একই সঙ্গে আসা ভক্ত, পূজার্থী, দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক পর্যটক ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনে শামিল হন। উত্তর প্রান্তে ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও দক্ষিণে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের তিন কিলোমিটার বেলাভূমি লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা পলাশি দাশ জানান, চার দিন ধরে মায়ের পূজা করেছি। আজ মাকে বিদায় জানাতে এসেছি। শহরের বিডিআর ক্যাম্প থেকে আসা লাবলু সুশীল বলেন, পাড়ার বন্ধুরা মিলে পূজার আয়োজন করি প্রতিবছর। সবাই মিলে মাকে বিদায় দিলাম।
কক্সবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনজিৎ দাশ জানান, সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ম-প থেকে সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা আনা পর্যন্ত প্রতিমাবাহী গাড়িতে পুলিশ ছিল। এ ছাড়া সমুদ্র সৈকতের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে বিজয়া দশমীতে মায়ের পায়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। শুভ শক্তির জয়ের প্রত্যাশা জানিয়ে দেবীর কাছে ছিল প্রার্থনা। ছিল পুজোর আনন্দের রেশ আর বিদায়ের সুরও। আসছে বছর আবার হবে, এই প্রত্যাশায় এবার আনন্দের রেশটুকু থেকে যাবে আগামী সময়ের জন্য। চারদিকে ঢাকের বাজনার সঙ্গে নাচ ছিলেন হাজারো মানুষ। কেউ কেউ দেবীর উদ্দেশে দিচ্ছিলেন উলুধ্বনি। আবার কেউ কেউ মায়ের বিসর্জনে অশ্রুসিক্ত। এমন উৎসব মুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এই বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব।