৮ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১২ জন। দেশে মহামারিকালে একদিনে এত মৃত্যু এই প্রথম দেখলো বাংলাদেশ। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ১৬ হাজার পার হলো।
দেশে করোনা সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ হয়েছে তা বোঝা যায় গত পাঁচদিনের মৃত্যুতে। এ সময় মারা গেছেন ৯৩৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, ৯ জুলাই ২১২ জন, ৮ জুলাই ১৯৯ জন, ৭ জুলাই ২০১ জন, ৬ জুলাই ১৬৩ ও ৫ জুলাই ১৬৪ জন।
হাজার মৃত্যু
৪ জুলাই ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়। সেদিন স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছিল, মোট মৃত্যু ১৫ হাজার ৬৫ জন। সে হিসাবে গত ছয় দিনে দেশে মহামারিকালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হলো।
এর আগে দ্রুততম হাজার পেরিয়েছিল আট দিনে। ওই সময়কালে মারা গেছেন এক হাজার ১২ জন। ২৭ জুন ১১৯ জন, ২৮ জুন ১০৪, ২৯ জুন ১১২, ৩০ জুন ১১৫, ১ জুলাই ১৪৩, ২ জুলাই ১৩২, ৩ জুলাই ১৩৪ ও ৪ জুলাই ১৫৩ জন।
গেল বছরের মার্চ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু দুই হাজার ছাড়ায়। পরের হাজার রোগীর মৃত্যু হয় মাত্র ২৫ দিনে। তৃতীয় এক হাজার রোগীর মৃত্যু হয় ২৩ দিনে।
করোনায় মৃতের সংখ্যা চার হাজার পূর্ণ হয় পরের ২৮ দিনে। পাঁচ হাজার পূর্ণ হয় আরও ২৮ দিনে, ছয় হাজার পূর্ণ হতে সময় লাগে ৪৩ দিন, সাত হাজার ৩৮ দিনে ও আট হাজার পূর্ণ হয় পরের ৪২ দিনে। নয় হাজার পেরোনোর পরই বাড়তে থাকে গতি। এরপর মাত্র ১৫ দিনে মারা যায় আরও এক হাজার। তখন অর্থাৎ চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মোট মৃত্যু ছাড়ায় দশ হাজার।
এরপর ১০ থেকে ১১ হাজার; অর্থাৎ পরবর্তী এক হাজার রোগীর মৃত্যু হতে সময় লেগেছে মাত্র ১০ দিন। ১২ হাজার হয়েছে পরের ১৬ দিনে, ১৩ হাজার হয়েছে পরের ৩১ দিনে, ১৪ হাজার হয়েছে ১৫ দিনে।
১৪ থেকে ১৫ হাজার মৃত্যু হয় মাত্র আটদিনে। এবারে ৪ জুলাই থেকে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হতে সময় নিল মাত্র পাঁচদিন।
শনাক্তের গতি
সর্বোচ্চ ২১২ মৃত্যুর দিনে নতুন করে ১১ হাজার ৩২৪ জনের সংক্রমণের কথাও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাদের নিয়ে ১৬ মাসের মহামারিকালে করোনা রোগীর সংখ্যা ছাড়ালো ১০ লাখ। দেশে সরকারি হিসাবে এখন করোনা শনাক্ত হলেন ১০ লাখ ৫৪৩ জন।
টানা চতুর্থ দিনের মতো শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে। এর আগে গত ৮ জুলাই শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৬৫১ জন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে ৭ জুলাই ১১ হাজার ১৬২ জন ও ৬ জুলাই শনাক্ত হন ১১ হাজার ৫২৫ জন।
গত ২৯ জুন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৯ লাখ। সেই হিসেবে ১০ লাখ ছাড়াতে অর্থাৎ নতুন এক লাখ শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ১০ দিনে। মৃত্যুর পাশাপাশি এক লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও এটা সবচেয়ে কম সময়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতবছরের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্তের তিন মাস পর এক লাখ রোগী ছাড়ায় ১৮ জুন। তার একমাস পর ১৮ জুলাই শনাক্ত রোগী দুই লাখ ছাড়ায়। ২৬ আগস্ট তিন লাখ রোগী হতে সময় লাগে এক মাস ৯ দিন।
তিন লাখ থেকে চার লাখ রোগী ছাড়ায় গত ২৬ অক্টোবর। পরবর্তী এক লাখ রোগী ৫৫ দিনে শনাক্ত হয়ে পাঁচ লাখ রোগী ছাড়ায় গত ২০ ডিসেম্বর। এরপর সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখী হয়। ২৯ মার্চ এসে ছয় লাখ শনাক্ত হয়।
কিন্তু এ বছরের মধ্য-মার্চ থেকেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ওই সময় এক লাখ শনাক্ত হয় মাত্র ১৬ দিনে। ৫ এপ্রিল সরকার বিধিনিষেধ দিলে সংক্রমণ কমে আসে। পরের এক লাখ শনাক্ত হয় ৪৭ দিনে। ঈদের পর ৮ থেকে ৯ লাখ রোগী হয় ২৯ দিনে (২৯ জুন)।
করোনার এখনকার সবচেয়ে দ্রুত সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এক লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় নিল মাত্র ১০ দিন।
‘মানুষ কানেই নেয়নি’
পাঁচ এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে পড়ে। শহর ছেড়ে অনেকে গ্রামে যায়। যেখানে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। এ কারণে ঈদের পর সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
‘গত ঈদে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনমানুষের স্রোত থামিয়ে রাখা যায়নি। বরং সে সময় মানুষ দলবেঁধে, হেঁটে, গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছিল।’ এতেও সংক্রমণ বেড়েছে বলে জানান কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিরোধ করতে পারিনি। যতদূর সমর্থ্য হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশে ঢোকার পর আমরা একে একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব বিধিবিধান মানার প্রয়োজন ছিল, সেসব কথা মানুষ কানেই নেয়নি।’