হাকিমুন ন্নেছা বাপ্পিঃ
এই অপরূপ সৌন্দর্য্য আল্লাহ একমাত্র বাঙালি নারীকেই দান করেছেন।সেই সাথে তাদের অসীম ভালবাসার ক্ষমতাও দিয়েছেন। বাঙালি নারী সাহসী, দূর্বার, নির্ভীক। তারা সাহসী হয় তারা ভালবাসার জন্য, পরিবারের জন্য, প্রিয় মানুষটির জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারলে।
বাঙালি নারীদের মন খুব নরম, কখনো বাবার আদরের মেয়ে,আবার কখনো স্বামীর সুখের সংসার আবার কখনো সন্তানদের আগলে রাখা বৃদ্ধ বেলার হাহাকার। কিন্তু তারা সেটা কখনো মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারেনা, হয়তো করতে চায়না কারণ এতেই বেঁধে দিয়েছে বিধাতা তাদের জীবন সংগ্রাম।
অসীম ধৈর্য্য, ত্যাগ, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতার মাঝেও আপনজনদের খুশী রাখার জন্য নিজের সব কিছুকে বিসর্জন দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ একমাত্র নারীদের দিয়েছেন।
আমাদের দেশের নারীদের জন্মের পর থেকেই ত্যাগ করতে হয়, মধ্যবিত্ত পরিবারে যদি ছেলে বড় হয়, আর মেয়েটি ছোট হয়, তাহলে চাওয়া পাওয়ার দিক থেকে অনেক বাবা-মা ছেলের আবদার গুলোকে আগে প্রাধান্য দেন। মেয়েটিকে এই বলে বুঝানো হয় যে,তোর বড় ভাই সংসারের বড় ছেলে ওকে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে সংসারের হাল ধরতে হবে,পরে তুই তোর ভাইয়ের কাছে ইচ্ছেমত আবদার করতে পারবি। মেয়েটিকে সবসময় আশার আলো দেখানো হয়, কিন্তু তা পূরণ করা হয়না। সে কোন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করতে চায়, তার কি করতে ভালো লাগে তা জিজ্ঞেস না করেই পরিবারের বড়দের বিশেষ করে বড় ভাইয়ের ইচ্ছা গুলো তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
একটি মেয়েকে জন্মের পর থেকে ত্যাগ করতে হয়। ত্যাগ করতে হয় তার ইচ্ছে গুলোকে,ত্যাগ করতে হয় মনের অনুভূতি গুলোকে। পিতার ঘর ত্যাগ করতে হয়, বিয়ের পর ত্যাগ করতে হয় তার নাম, সন্তান লাভের পর ত্যাগ করতে হয় তার রাতের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া। সন্তান বড় হয়ে খারাপ আচরণ করলে ত্যাগ করতে সন্তানকে নিয়ে তার সমস্ত আশা-ভরসা কে। আবার ছেলের বউ যদি খারাপ হয়, তাহলে ত্যাগ করতে হয় তার আপন স্বামীর ঘর, মেয়েটির শেষ জীবনের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম, আর একমাত্র সঙ্গী থাকে চোখের জল।
মেয়ে মানুষ আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব সৃষ্টি গুলোর মধ্যে একটি। আল্লাহ বলেছেন, “যখন আমি কোন বান্দার প্রতি খুব খুশী হই তখন তাদের কন্যা সন্তান দান করি”আমাদের নবীজী বলছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”কথাগুলো একবার মন থেকে চিন্তা করে দেখুন নারীদের কত মর্যাদা, কত সম্মান দেয়া হয়েছে। এখন আপনাদের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা কি নারীদের সেইভাবে সম্মান করছি? আমাদের বর্তমান সমাজে নারীদের অবস্থান কোথায়।
বর্তমান যুগে নারীদের প্রতি যে আচরণ করা হয় তা সত্যি সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দেয় যখন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হত। আজ এত সভ্যতার যুগে এসেও নারীরা একা চলতে রয়ে যায় সংশয়।
ইসলাম নারীকে অনেক অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে শুধু ইসলাম নই পৃথিবীর সকল ধর্মেই নারীদের সঠিক মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। আর আমাদের সমাজের উচিৎ নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর।
পরিশেষে একটা কথায় বলবো, নারী দিবস থেকে শপথ গ্রহণ করি আর যেন কোন নারী কখনো চিন্তা না করে যেন ঘরের বাহিরে গেলে তাদের পড়তে হবে না অনিশ্চয়তায়। একটি মেয়ে হয় কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো স্ত্রী, কারো মা। আমরা আমাদের মা, মেয়ে এবং স্ত্রীদের নিশ্চয়তা নিজেরা নিবো।
আর যেন কোন মেয়েকে নুসরাতের মত পুড়ে এবং চলন্ত বাসে কোন মেয়েকে হতে না হয় ধর্ষণ ও রাস্তায় চলতে গিয়ে হতে হবে না হিংস্রতার শিকার এটাই হোক আমাদের এই বছরের নারী দিবসের ।