ঢাকামঙ্গলবার , ৬ জুলাই ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আরএকে সিরামিকস এর বিরুদ্ধে ৩৯ কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলা

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুলাই ৬, ২০২১ ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর টাইলস বিপননী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ট্রেডিং টাইলসের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে।ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় আজ সোমবার (৫ জুলাই) প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি এবং স্টার সিরামিক লিমিটেডের নিকট হতে বিভিন্ন সাইজের টাইলস এবং স্যানিটারি আইটেম ক্রয়পূর্বক তা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাটযোগ্য সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য রাজস্ব যথাযথ ভাবে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান না করে ও সঠিক বিক্রয় তথ্য গোপন করে ঘোষণা বর্হিভুত স্থানে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংরক্ষণ করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে নিজেরা ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছে এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছে — এমন একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল গত ৩ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বর্হিভূত স্থানে (নর্দান পল্লী ৮৯, গাউসুল আজম এভিনিউ সেক্টর #১৪, উত্তরা, ঢাকা) আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট সংক্রান্ত মূল দলিলপত্র মোড়কজাত করে এগুলো ধ্বংস করার জন্য ঐ স্থানে স্তুপ করা হয়েছিল। অভিযানে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে এগুলো গোপনে ধ্বংস করার জন্য সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।

গোয়েন্দা দল তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় আরএকে টাওয়ার (৭ম তলা), প্লট -১/এ, জসিমউদ্দীন এভিনিউ, সেক্টর-৩, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ এ একইসঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে।

সংস্থাটির উপপরিচালক তানভীর আহমেদ অভিযানটিতে নেতৃত্ব দেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযানকালে দেখা যায়, এটি নিবন্ধনের ঘোষণা বহির্ভূত স্থান।অভিযানের পর উক্ত কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে ঘটনাস্থলে মালিক পক্ষকে অনুরোধ করলে তারা প্রতিষ্ঠান খুলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন।

এসময় অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত কর্মকর্তারা ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন।একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশি করা হয়।এর সূত্র ধরে পরবর্তীতে মূসক সংক্রান্ত সকল দলিলাদি জব্দ করা হয়।

তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত আড়াআড়ি যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।তদন্তের মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ।

দেখা যায়, ব্যবসায়ী পর্যায়ে প্রকৃত সরবরাহ মূল্যের বিপরীতে ৪ ও ৫ শতাংশ হারে মূসক প্রদানের আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সরবরাহ মূল্য প্রদর্শন না করে কমিশনকে বিক্রয় মূল্য হিসেবে প্রদর্শন করে তার বিপরীতে মূসক পরিশোধ করেছে।

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক পরিশোধের এই আইনী বাধ্যবাধকতাকে লংঘন করেছে মর্মে তদন্তে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় মূল্য ২১ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৩৮ টাকা কমিশন প্রদর্শন করেছে, যার ওপর তারা ১ কোটি ৫৪ হাজার ৬৫৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কমিশনসহ মোট ভ্যাটযোগ্য বিক্রয় মূল্য ছিল ৬৩২কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ৯৮২ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ২৮কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২৭ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ টাকা ফাঁকি উদঘাটিত হয়।

এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮২ টাকা বিলম্বজনিত সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

তদন্তে আরও দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্যসহ নানা ধরণের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে।

উল্লেখ্য, একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা ইতোপূর্বে ১২৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির ভিন্ন একটি মামলা দায়ের করেছিল যা বর্তমানে বিচারিক প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট