ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আধুনিক আশ্রয়ণ প্রকল্প

প্রতিবেদক
সিএনএ

সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮ ৬:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদক: কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক নগরী। সেখানে চার হাজার ৪০৯ ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। পাঁচ তলা বিশিষ্ট ১৩৭টি বহুতল ভবন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে দশ তলা বিশিষ্ট একটি উচ্চ টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। এতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান বলেন, ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিতব্য জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। সেখানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ করা হবে। পরিবারগুলোর মধ্যে অধিকাংশই মৎস্যজীবি বিধায় জীবিকার সংস্থানের জন্য আধুনিক শুটকি পল্লী নির্মাণ করা হবে। স্থাপত্যশৈলী ও আধুনিক নগরায়ণ পরিকল্পনায় নির্মিত ওই শুটকি পল্লীটি কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন এলকায় পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মোট ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমিতে এ বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কাজ অনেকখানি এগিয়েছে। কিছু ভবন নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। ভবনগুলো নির্মাণ করছে শসস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে জেলা শহরের সাথে সংযোগের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর মাধ্যমে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাকখালী নদীর ওপর কস্তুরা ঘাটে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ পিসি বক্স গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারীর মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭২৯ টাকা ব্যয়ে জেটিঘাট হতে প্রকল্প অফিস পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এ কাজের অগ্রগতি বর্তমানে ২০ শতাংশ।
১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ টাকা ব্যয়ে খুরুশকুলের কৃষ্টের দোকান থেকে সালেহ আহমেদ কোম্পানী পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে এই রাস্তার ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদী ভাঙন থেকে প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বাঁধ নির্মাণ করবে। নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর মাধ্যমে ৯৭২ লক্ষ টাকার বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে পাম্প হাউস ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের জন্য ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমির ডিজিটাল জরিপ এবং ৪৪ দশমিক ৮৮ একর জমির উন্নয়ন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
অবশিষ্ট ২০৮ দশমিক ৪৭ একর জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নৌবাহিনীর মাধ্যমে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভরাটের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে এবং কাজ চলছে। ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর ডান দিকে ৩ দশমিক ৮৯৪ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্যডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড লি. কে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় ৩ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার খাল খনন ও ২১২ একর জমি ভরাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬ ঘনমিটার মাটির কাজ শেষ হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে ২৪ হাজার ১৬৩টি সিসি ব্লক। আরও ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩১৯টি সিসি ব্লক নির্মাণ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিমান বন্দরটি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই লক্ষ্যে বিমান বন্দরের আশপাশের এলাকায় সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত বাসিন্দাদের স্থানাস্তরের প্রয়োজন হয়।
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার ৪০৯টি পরিবার ওই স্থানে বসবাস করছিলেন। তারা যাতে উদ্বাস্তু না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে খুরুশকুলে বিশেষ আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প এটি।
সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার জন্য ২০১০ সালে চার হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট