কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর লবণ শিল্প এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পথে। এই এলাকার একমাত্র চলাচল পথ ‘ইসলামপুর-বটতলী দেড় কিলোমিটারের সড়কটি’ খানাখন্দে মরণ ফাঁদে পরিণত হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরে থাক পায়ে হাঁটাও দুরূহ হয়ে পড়েছে।
গর্তে উল্টে যাচ্ছে লবণ বোঝাই ট্রাক। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। লবণ পরিবহণে সরকারি রাজস্বের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সড়ক উন্নয়ন ফি দেয়ার পরও যাতায়াত দুর্ভোগের কারণে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মিল মালিক, লবণ ও পরিবহণ ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে পথে নেমেছে এলাকাবাসী। ইসলামপুর সমাজ কল্যাণ ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে শুক্রবার (২০ আগস্ট) ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে তারা। মানববন্ধনে স্থানীয় মিল মালিক, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ নানাপেশার লোকজন অংশ নেন।
সূত্র জানায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ১৯৭২ সালে মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক উদ্যোক্তা ইসলামপুর লঞ্চ ঘাটে ‘কক্সবাজার সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে লবণ মিল স্থাপন করেন। এর পর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে বাড়তে থাকে লবণ মিল। কালের পরিক্রমায় এখানে বর্তমানে প্রায় ৭০টি লবণ মিল রয়েছে। এখন নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম চালাচ্ছে অর্ধশতাধিক মিল। কক্সবাজার জেলার অধিকাংশ লবণ
এখানকার মিলে আনা হয়। আর দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশ লবণ কক্সবাজারেই উৎপাদন ও এখান থেকে সারা দেশে সরবরাহ হয়। বর্ষা মৌসুমেও এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ ট্রাক লবণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। গ্রীষ্মে ট্রাকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০-৭০টিতে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাপিতখালী বটতলী এলাকা হয়ে ইসলামপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক দিয়েই লবণের এসব ট্রাক মহাসড়কে উঠে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
দেখা গেছে, আরকান সড়কের বটতলী স্টেশন থেকে ইসলামপুর বাজার পর্যন্ত পুরো রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে পানি জমে একাকার হয়ে ছোট-বড় যানবাহন উল্টে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বটতলী স্টেশন থেকে চৌফলদন্ডী ব্রিজ পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং করতে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার হয়। মেসার্স চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান এর কার্যাদেশ পায়। উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি কাজ শেষ হলেও ইসলামপুর বাজার থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত কার্পেটিং হয়নি এখনও।
স্থানীয় লবণ ব্যবসায়ী হারুন রশিদ জানান, সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। তাছাড়া শিল্প নগরী হিসেবে প্রতিদিন প্রবেশ করে লবণ বোঝাই ট্রাক। সড়কের বেশকিছু অংশ জুড়ে খানাখন্দে ভরে থাকায় চালকরা এ সড়কে প্রবেশ করতে চান না। এমনটি হলে সারাদেশে লবণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ট্রাকচালক বশর আহমদ বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া হয় আমাদের। ইসলামপুরের মতো অকেজো সড়ক কোথাও দেখিনি। বৃষ্টির পানি জমে থাকলে বোঝা যায় না কোথায় গর্ত আর কোথায় সমতল। সরু হওয়ায় অন্য পাশ দিয়েও যাওয়া যায় না। এতে অনেক ট্রাক দুর্ঘটনায় শিকার হয়।
স্থানীয় সিএনজিচালক আলী আহমদের আক্ষেপ, চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় আমাদের। জানি না এ থেকে কবে মুক্তি পাবো?
ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম বলেন, লবণ পরিবহণের বিপরীতে ট্রাক প্রতি রাজস্ব দেয়া হয়। প্রতি বছর কোটি টাকা রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমলেও সেই অনুপাতে সড়কটির উন্নয়ন নেই। বিগত চার বছরেরও অধিক সময় খানাখন্দে ভরা সড়কটি। বছর দুয়েক আগে সড়কটি মেরামতে টেন্ডার হলেও ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন করেনি। তবু থেমে নেই লবণ পরিবহন। মোটামুটি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বছর তিনেক আগে থেকে সড়ক উন্নয়ন ফি নামে প্রতি ট্রাক থেকে টাকা দেয়া হচ্ছে। এরপরও সড়কটির গর্ত ভরে না। বুধবার ও শুক্রবার লবণ বোঝাই দুটি ট্রাক সড়কের গর্তে উল্টে গিয়ে লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ী। দুর্ঘটনার কারণে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়।
ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, বটতলী স্টেশন-ইসলামপুর বাজার সড়কটি শিল্প এলাকা হিসেবে ২৫-৩০ মেট্রিকটন ওজন নিয়ে যান চলাচল করে। কিন্তু এলজিইডির সড়ক হিসেবে এটি তৈরি হয় ১২-১৫ মেট্রিকটন ওজন বহনের উপযোগী হিসেবে। এতে সড়কটির জোড়াতালির সংস্কার কোনো কাজে আসে না। চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হলে সড়কটি শিল্পাঞ্চল হিসেবে তৈরি করা জরুরি।
চলমান সংস্কার কাজের সার্বিক বিষয়ে জানতে মেসার্স চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির মালিক ফরিদুল আলমের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করে বার বার লাইন কেটে দেয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, সড়কটি আসলেই অতিগুরুত্বপূর্ণ। চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।