শফিউর রহমান তপন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হিসাব সহকারী। তিনি বর্তমানে মোট বেতন-ভাতা পান ৭৪ হাজার ৫১২ টাকা। তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারী কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর কোয়ার্টারে বসবাস করলেও পাচ্ছেন যাতায়াত ভাতা।
শুধু তপনই নন, অধ্যক্ষের পিএ (অফিস সহকারী) দিলরুবা খাতুন (তৃতীয় শ্রেণির এমপিওভুক্ত কর্মচারী) এবং হিসাব সহকারী কাম ক্যাশিয়ার (তৃতীয় শ্রেণির নন-এমপিও কর্মচারী) সাইদা পারভীন শম্পাও একই বেতন-ভাতা পান। এদের মধ্যে অধ্যক্ষের পিএ দিলরুবা খাতুন গত ডিসেম্বরে অবসরে গেলেও তাকে এক্সটেনশন দিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিষ্ঠানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিধিবিধান অনুযায়ী একজন কলেজ অধ্যক্ষের চতুর্থ গ্রেডের শেষ ধাপে মোট বেতন ৭২ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান তিনি। কিন্তু ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির তিন কর্মচারী প্রত্যেকে বেতন-ভাতা পান মাসে ৭৪ হাজার ৫১২ টাকা করে।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, ‘আমি এই প্রতিষ্ঠানে এসেছি প্রায় সাত মাস হলো। তারা তো আগে থেকেই এই বেতন পেয়ে আসছেন। বেতন নির্ধারণের বিষয়টি আগের। আমার সময় এমনটি হয়নি।’
প্রসঙ্গত, বেসরকারি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজটি সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ছয় মাস আগে গত বছর ২৯ ডিসেম্বর সরকারি কলেজের অধ্যাপক কামরুন নাহারকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয় সরকার।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফোরামের অভিযোগ, সরকারি নিয়মে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর শেষ ধাপে (১০ম গ্রেড) মোট বেতন ৩৮ হাজার ৩৪০ টাকা। বাড়িভাড়া (রাজধানীতে) ৫০ শতাংশ হিসেবে পাওয়ার কথা ১৯ হাজার ১৭০ টাকা। সব মিলিয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে শেষ ধাপে সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা পেতে পারেন মোট ৪৮ হাজার ৪২০ টাকা। কিন্তু ওই তিন কর্মচারী প্রত্যেকে প্রতিমাসে অতিরিক্ত ২৬ হাজারের বেশি টাকা উত্তোলন করছেন।
অভিযোগ মতে, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও তাদের প্রভাষকের স্কেলে বেতন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ২০০৭ সালে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) তদন্ত করে কমিয়ে বেতন নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে ৮ জন কর্মচারীর ৫ বছরের অতিরিক্ত ২১ লাখ ৬ হাজার ৪২০ টাকা প্রতিষ্ঠানের কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। এসব কর্মচারীদের মধ্যে মধ্যে দুইজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অন্য তিনজন অবসরে গেছেন অতিরিক্ত অর্থ ফেরত না দিয়েই। আর বর্তমানে কর্মরত আছেন অফিস সহকারী শফিউর রহমান তপন, অধ্যক্ষের পিএ (অফিস সহকারী) দিলরুবা খাতুন (তৃতীয় শ্রেণির এমপিওভুক্ত কর্মচারী) এবং হিসাব সহকারী কাম ক্যাশিয়ার (তৃতীয় শ্রেণির নন-এমপিও কর্মচারী) সাইদা পারভীন শম্পা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযুক্ত এই তিনজন অতিরিক্ত উত্তোলিত বেতন-ভাতা ফেরত দেননি। উপরন্তু তাদের বেতন আরও বেড়েছে।
কলেজ ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে থাকলেও শফিউর রহমান তপন ও সাইদা পারভীন শম্পা প্রতিমাসেই যাতায়াত ভাতা নিচ্ছেন। অভিযোগ ওঠার পর দিলরুবা খাতুন কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়েছেন। গত বছর ডিসেম্বরে তিনি অবসরে গেলেও তাকে এক্সটেনশন দিয়ে এখনও কলেজের চাকরিতে রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে শফিউর রহমান তপন বলেন, ‘আমরা ২৮ বছর আগে যোগদান করেছি। তখন বেতন স্কেল ছিল ১ হাজার ৭২৫ টাকা। এরপর টাইমস্কেল হয়েছে। টাইমস্কেল পাওয়ার পর আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় বেতন বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকা স্কেল হয়েছিল। গভর্নিং বড়ির অনুমোদন সাপেক্ষ একটি স্কেল পরিবর্তন হয়েছিল।’
অধ্যক্ষের চেয়ে বেতন কীভাবে বেশি হয় জানতে চাইলে স্পষ্ট কোনও জবাব দিতে পারেননি তিনি।
আগের অতিরিক্ত উত্তোলন করা বেতন প্রতিষ্ঠানের কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে শফিউর রহমান তপন বলেন, ‘আমার মনে নেই।’
অতিরিক্ত ফেরত দেওয়া এবং বর্তমানে বেতন বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (১৮ জুলাই) একাধিকবার দিলরুবা খাতুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোনে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি কোনও জবাব দেননি।
জানতে চাইলে অফিস সহকারী সাইদা পারভীন শম্পা বলেন, ‘এটা অফিসিয়াল বিষয় এভাবে কথা বলবো না।’ অফিসে তাকে পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন অফিসে যাই না।’
অতিরিক্ত বেতন ফেরত দেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে সাইদা পারভীন শম্পা বলেন, ‘কোন রিপোর্ট বলছেন আমার মনে নেই। অফিসিয়ালভাবে কথা বলেন।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সুজন বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটি দুর্নীতি করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর বছরের পর বছর পরবর্তী কমিটিগুলোর কিছু সদস্য এই অনিয়ম জিইয়ে রেখেছেন নিজেদের স্বার্থে। বিগত সব কমিটির কিছু সদস্য ভর্তিবাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্য করতে প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাখে। এর ফল ভোগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। আমরা এর প্রতিকার চাই।’