করোনা মহামারিকালে রবিবার (১১ জুলাই) সারাদেশে সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু এবং সোমবার (১২ জুলাই) সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জন শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। এ খবরের পরও দেশে কঠোর বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে শিথিল হতে যাওয়া লকডাউনের ভেতরে চলতে পারে গণপরিবহন, খুলতে পারে শপিং মল ও দোকানপাট। একইসঙ্গে আগামী ১৭ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে কোরবানির পশুর হাট, চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত। তবে করোনার এই পরিস্থিতিতে দোকান খোলার পক্ষে নয় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
সংগঠনটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির ঈদে এমনিতেই আমাদের ব্যবসা কম থাকে। এছাড়া এখন করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা দোকান মালিক সমিতি দোকানপাট খোলার পক্ষে নই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ক্ষতিটা হওয়ার তা হয়ে গেছে। দোকানের ভেতরে যে মালগুলো আছে, সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, কঠোর যে লকডাউন দেওয়া হয়েছে, আর যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, যেভাবে মৃত্যু বাড়ছে, এ অবস্থায় দোকানপাট খুলে দেওয়ার কথা বলার সাহস আমাদের নেই। রমজানের ঈদ সামনে রেখে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলেছিলাম। তখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন নিয়ন্ত্রণে নেই।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের চেয়ে আমাদের এখানে সংক্রমণ বাড়ছে। জনসংখ্যার বিচারে শতাংশ হিসাব করলে ভারতের চেয়ে এখানে মৃত্যুও বেশি। ভারতে কখনও ৩০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হয়নি। এখানে ৩০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের হার। কোথাও কোথাও ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সংক্রমণ হচ্ছে।’
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘ভারতের চেয়ে আমরা এখন অসম্ভব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে দোকানপাট খোলার পক্ষে আমরা নই।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘১৪ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন। মাত্র দুই-তিন দিনের জন্য দোকান খুললে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। ভাড়া দিতে হবে। সমিতির চাঁদা, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল দিতে হবে।’ এই তিন দিন দোকান খুলে এত টাকা দেওয়া কারোর পক্ষেই সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এই দুই দিন বা তিন দিনের জন্য কোরবানির গরু কেনা ছাড়া কেউ বাইরে বের হবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা এখন চুপচাপ থাকতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘দোকান মালিক সমিতির কেউ দোকান খোলার পক্ষে না। সরকার যেভাবে চায়, আমরা সেভাবেই চলতে চাই বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলমান লকডাউন আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাতের পর আবারও ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে কোরবানির ঈদের বিবেচনায় লকডাউনের শর্ত শিথিল হতে পারে। খুলে দেওয়া হতে পারে দোকানপাট, শপিং মল। অনুমতি দেওয়া হতে পারে গণপরিবহন চলাচলের। তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ২৩ জুলাইয়ের পর আবারও কঠিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্র।
জানা গেছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সাধারণ মানুষের আর্থিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলমান লকডাউনের মেয়াদ ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা ভাবছে।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীতে ১৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯টি হাট বসবে। আগামী ১৭ জুলাই থেকে এসব হাটে পশু কেনাবেচা শুরু হবে। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঈদে গরু ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের কথা বিবেচনা করে লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যদিও কোরবানির আগে এ পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর রবিবার (১১ জুলাই) চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যারা অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন, তাদের আরও কঠোর আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছিল।
দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে এভাবে যদি রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে জানিয়ে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেছেন, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের ভেতরে হাসপাতালে কোনও সাধারণ বেড এবং আইসিইউ ফাঁকা থাকবে না।