কক্সবাজার: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২ হাজার রোহিঙ্গা প্রথম দলটির প্রত্যাবাসনে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। গত মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির আওতায় ৫ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হবে। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের প্রথম গ্রুপটিকে ফেরত নেয়া শুরু করবে মিয়ানমার।
বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের একটি লিস্ট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত বছরের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরুর পর সেখান থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, যেখান থেকে তারা পালিয়ে এসেছে সেখানে আর ফিরে যাবে না। এদিকে, বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা কাউকে জোর করে ফেরত পাঠাবে না। তবে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর কথা বললেও জাতিসংঘ বলছে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। কারণ, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়। রোববার বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ এবং পূর্নবাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটা অন্য দেশের ওপর নির্ভর করে যে এটা হবে কিনা। তবে আমাদের দিক থেকে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আর আমরা সেটাই করেছি।
বাংলাদেশ ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, বৃহস্পতিবার এই প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি। তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হবে। কাউকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না। গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু এ প্রক্রিয়া শুরু হতেই এক বছরের মতো সময় লেগে গেছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রাখাইনে সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধরা তাদের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে, নির্বিচারে গুলি করে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ ওই অঞ্চলে তদন্তের পর জানিয়েছে, সেখানে গণহত্যা এবং জাতিগত নিধন চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু মিয়ানমারের তরফ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দু’টি নৌকায় করে ২ হাজার ২৫১ জনের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন উইন মিয়াত আয়ে। অপরদিকে ২ হাজার ৯৫ জনের দ্বিতীয় গ্রুপটিকে পরে যে কোন সময় নৌকায় করে ফেরত পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষ তাদের এমন স্থানে পাঠাবে যেখানে তাদের জন্য সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং তারা কাজ করারও সুযোগ পাবেন বলে জানানো হয়েছে।