নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নাশকতা,হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনাসহ একাধিক মামলার আসামি বিএনপির তিন নেতা নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরো নিমাইকাশারী এলাকা। ওই এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস রয়েছে।
মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) সকালে সরেজমিনে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নান ডাক্তার, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ছাদু ও বিএনপি নেতা আবু তাহের। ওই এলাকার জায়গা জমি ক্রয়-বিক্রয় ও দখল, বিচার, সালিশীসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের নির্দেশ ছাড়া ওই এলাকায় কোন কিছুই বাস্তবায়িত হয় না।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, কখনো ডাক্তারি পড়াশুনা না করে ওষুধের দোকান চালিয়ে এলাকায় হয়ে উঠেছেন ডাক্তার। নিমাইকাশারী বাজার মোড় এলাকায় চার কাঠা জমির উপর করেছেন চারতলা বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা, একই এলাকায় চার কাঠা জমিতে রয়েছে তার নামে মার্কেট, যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি বিশ লাখ টাকা। এছাড়াও এলাকার কন্টিনেন্টালে আঠার কাঠা জমির মালিকানা রয়েছে তার। হাজী কালাচাঁন বালুর মাঠ সংলগ্ন ছয় কাঠা জমিতে চৌদ্দ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন আবদুল মান্নান ওরফে ডাক্তার মান্নান।
আবু তাহের ওরফে নেতা তাহের ব্যাংকে চাকরি করলেও নিমাইকাশারী এলাকার মানুষ তাঁকে বিএনপি নেতা তাহের হিসেবেই চিনেন। বিএনপির আমলে মাঠ কাপানো আবু তাহের বাড়ি গাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এলাকায় কোন জায়গা জমি বিক্রি হলে আবু তাহের কাছেই বিক্রি করতে হবে এটা ওই এলাকার একরকম রীতি হয়ে দাড়িয়েছে। জমিতে সমস্যা বা ওয়ারিশ থাকলেও তিনি জমি বায়না করেন। তার সহযোগী হিসেবে থাকেন আবদুল মান্নান ও ছাদু। বিচার সালিশীসহ এলাকার পান থেকে চুন খশলেই আবু তাহের বাহিনী মীমাংসার দায়িত্ব নেয়, বিচারের নামে মোটা অংকের টাকায় করেন রফাদফা।
আবু তাহেরের নিমাইকাশারী এলাকার সিকোটেক্স গার্মেন্ট সংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে তিন তলা বাড়ি করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা। পাশেই পাচঁ কাঠা জমি কিনেছেন যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা, এছাড়াও তার বাড়ির সামনে রয়েছে পাঁচ কাঠা জমি, এছাড়াও কন্টিনেন্টাল এলাকায় আঠার কাঠা জমিতে মালিকানা রয়েছে তার। হাজী কালাচান বালুর মাঠ সংলগ্ন জমিতে চৌদ্দ তলা ভবনের মালিকানা, নূরবাগ কাঁচাবাজার সংলগ্ন দুটো দশতলা ভবনের মালিকানাসহ নামে বেনামে বহুজমি জায়গার মালিক আবু তাহের। কিছু দিন আগেও তিনি সানারপাঁড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক বশির উদ্দিনকে এলাকার সন্ত্রাসীদের নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
তার আরেক সহযোগী সাইফুল ইসলাম ছাদু, ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। এলাকায় তিনি জমির দালাল হিসেবে পরিচিত। নিমাইকাশারী মোড়ে এলাকায় বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে তার। মাদানীনগর চার রাস্তার মোড়ে এলাকায় প্রায় পাঁচ কাঠা জমিতে একটি মার্কেট রয়েছে তার। যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা। এছাড়াও কন্টিনেন্টালে আঠার কাঠা জমিতে মালিকানা রয়েছে তার। হাজী কালাচান বালুর মাঠ সংলগ্ন চৌদ্দ তলা ভবনের মালিকানা রয়েছে। রয়েছে নূরবাগ কাঁচাবাজার সংলগ্ন দুটি দশতলা ভবনের মালিকানাও রয়েছে তার নামে। এছাড়াও নামে বেনামে রয়েছে অনেক জায়গা-জমি। ওয়ারিশ বা ভেজাল জমি কিনে বিক্রি করাই তার পেশা।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের আমলে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই তিন সহযোগী। বিচার,সালিশ, এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে তাদের নাম পাওয়া যায়।
অভিযোগের ব্যাপারে বিএনপি নেতা আবু তাহের জানান, আমি যা কিছু করেছি বৈধ উপায়ে করেছি, বিএনপির রাজনীতির সাথে আমি জড়িত নই। আব্দুল মান্নান মিয়া ওরফে ডাক্তার মান্নানের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে কালের কণ্ঠেরর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনটি কেটে বন্ধ করে দেন। সাইফুল ইসলাম ছাদুর সাথে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া বলেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত জ্বালাও পোড়াও মামলাসহ একাধিক মামলার আসামিরা কিভাবে এলাকায় জমি কেনা বেচাসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে তা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এসকল চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
দ্ধিরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান বলেন এসকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানান, দাগী আসামিদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র : কালের কন্ঠ