জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: গতকাল ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়েছে। কক্সবাজারের দুটি শরণার্থী শিবিরে প্রায় সাতাশ বছর ধরে অবস্থান করছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীরা। সেই সাথে গেলো বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা। আশ্রিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার সম্মানজনক বসবাসের লক্ষে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। এসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই কষ্টের কথা বললেও নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ পেলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথাও জানান।
বিশ্বের সব চেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং। নতুন ও পুরাতন মিলে প্রায় বারো লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় শিবির। ১৯৯১/১৯৯২ সাল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নেয় এসব রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে। ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীরা বলছে তারা স্বদেশে ফিরতে চায় মর্যাদার সাথে। উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দুর্ভোগের পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের আওতায় নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন।
বর্তমানে দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়ে বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফ দুটি উপজেলায় সর্বশেষ ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪ রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে সে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বলেন, আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই; তবে নাগরিক অধিকার, ধন-সম্পদসহ সবকিছু দিতে হবে। এভাবে আর বাস্তুহারা হিসেবে থাকতে চাই না।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ২০০৫ সালের জুলাই থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই এ কর্মসূচি স্থগিত করেছে মিয়ানমার। তিনি জানান, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তিনি বলেন, নতুন সমঝোতা চুক্তির পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের কাছ থেকে অনুকূল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম দফায় দেয়া তালিকার মাত্র আট শতাংশ তারা অনুমোদন দিয়েছে। মাত্র আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা যাচাই-বাছাই করতে তাদের এত সময় প্রয়োজন হলে ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে কত সময় লাগতে পারে ভাবতে গেলে আতঙ্কিত হই। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখালেও তাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো করতে পারি না। এ মুহূর্তে তাদের নিরাপদে স্বদেশে ফেরত পাঠানো জরুরি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাঁচ মাসে রোহিঙ্গাদের দ্বারা ১৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অর্ধশত রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। ক্যাম্প থেকে ১১টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক। ৬৭টি মাদক মামলায় ১০২ রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ৫ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২১৪টি বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে নানান সীমাবদ্ধতা সত্বেও পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রƒততম সময়ে ঘটে যাওয়া এ সংকট সফলতার সাথে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদের সরবরাহ করছে প্রয়োজনীয় নিত্য পন্যসহ সব ধরনের সহায়তা। নতুন করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ষাট শতাংশ শিশু যাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশ হাজার শিশুই এতিম। তাই সব কিছু বিবেচনার আওতায় এনে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর করার প্রত্যাশা স্থানীয় সচেতনমহলের।