করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের কারণে দিনাজপুরের হিলির বাজারগুলোতে আগের মতো মানুষজন না থাকায় আয়-রোজগার কমে গেছে সবার। চরম বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষজন। লকডাউনের মাঝে কীভাবে পরিবার-পরিজন চলবে, সে চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে সবার কপালে।
শুক্রবার (০২ জুলাই) সরেজমিনে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষজন তেমন নেই, অপেক্ষায় বসে রয়েছেন জুতা ও ছাতার কারিগররা। কেউ কাজ নিয়ে এলে যাই দাম বলছে করে দিচ্ছেন। তাদের সবার একই কথা, এভাবে চললে কীভাবে সংসার চলবে।
বাজারের খান বস্ত্রালয়ের মোড়ে বসা হিলির গ্রামের জুতার কারিগর বীরেন চন্দ্র বলেন, লকডাউন চলার কারণে কোনও কাজকর্ম নেই। একেবারে খালি হাতে বসে আছি। এর ওপর বৃষ্টিতে বাজারে লোকজন নেই। মানুষজন যদি না থাকে তাহলে কাজ হবে কোথা থেকে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা ইনকাম করেছি, এই টাকা দিয়ে কী হবে? কী দিয়ে চাল ও অসুস্থ মেয়ের জন্য ওষুধ কিনবো? আমার পরিবারে পাঁচ সদস্য। সবাই আমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই বসে আছি, যদি আরও কিছু আয় হয় সে আশায়।
তিনি বলেন, লকডাউনের আগে স্বাভাবিক দিনে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম হতো। তা দিয়ে কোনওরকমে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাসহ সংসার চলতো। আর আমরা কোনও সরকারি সহায়তা পাই না, গতবার লকডাউনের সময় অনেকেই আড়াই হাজার করে টাকা পেয়েছে। কিন্তু আমি পাইনি। এবার তো এখন পর্যন্ত কিছুই দেয়নি। তার মতো একই অবস্থা ওই মোড়ে বসা প্রত্যেক জুতার কারিগরের।
হিলি বাজারের মাছহাটির গলির মুখে বসা বাগজানা থেকে আসা ছাতা কারিগর আব্দুল মাবুদ বলেন, লকডাউনের কারণে মানুষজন বাজারে আসতে পারছে না। এ জন্য বাজার ফাঁকা। মানুষজন না এলে কাজ হবে কোথা থেকে। বর্ষা মৌসুম চলছে। তারপরও কোনও কাজ নেই। এই ব্যবসা তো সবসময়ে হয় না, এখন থেকে শুরু করে আশ্বিন কার্তিক মাস পর্যন্ত চলে। কিন্তু এবারে তো কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। অন্য সময় সকাল থেকে শুরু করে বিকাল পর্যন্ত ৫০০-৬০০ টাকা ইনকাম হয়ে যেতো। কিন্তু লকডাউন শুরুর পর কাজকাম নেই বললেই চলে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাত্র ২০০ টাকা ইনকাম হয়েছে।
অপর ছাতা কারিগর মকবুল হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে ছাতা মেরামতের কাজ করে আসছি। কোনওদিন এমন অবস্থা হয়নি। আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। আগে যেখানে ৫০০-৬০০ টাকা আয় ছিলো, এখন ২২০ টাকা আয় করেছি। এর মধ্যে দুপুরের ভাত খেলাম ৩০ টাকা দিয়ে। বাকি থাকলো ১৯০ টাকা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চারজনের সংসার আমার, যে টাকা আয় করেছি তা দিয়ে চাল কিনবো না তরকারি কিনবো সেই দুশ্চিন্তায় আছি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও খাদ্য সহায়তা আমাদের কাছে আসেনি। এলে প্রয়োজন অনুযায়ী অসহায়দের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হবে।