বিশেষ প্রতিবেদক:
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
তিনি বলেন, মানবিকতা বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত শব্দ। কক্সবাজারের স্থানীয় নারীরা রোহিঙ্গাদের দুর্দিনে পাশে ছিল। নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চরম মানবিকতার নজির স্থাপন করেছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে কক্সবাজার বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত বিশ্ব মানবিকতা দিবসের আলোচনা সভায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
সিসিএনএফ এর কোচেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, যুক্তির উপর দাঁড় করিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির হতাশা দূর করতে হবে। তিনি বলেন হতাশা যে কোনো মানুষের এবং যে কোনো জনগোষ্টির বড় শত্রু ও বড় ক্ষতির কারন।
অনুষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতির প্রশংসা করে প্রধান অতিথি বলেন, আজকের প্রোগ্রামে নারীকর্র্মীদের উপস্থিতি দেখে অনুমান করা যায় কক্সবাজারে কত সংখ্যক নারী মানবিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। নারীদের এ অবদান বিশ্ববাসীর সামনে তুলে আনার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। যে কোন দুর্যোগে নারী ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাই নারী কর্মীরাই সবচেয়ে সহজে দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের নিকটে পৌঁছতে পারে; এর প্রমাণ আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় নারীদের কাজে পেয়েছি। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুবিধা ও নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে বলে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
এ সময় তিনি রোহিঙ্গা মায়ানমার নাগরিক নিজ দেশে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত তাদের মধ্যে আশার আলো সৃষ্টি করা প্রতিটি মানবিক সহায়তা কর্মীর দায়িত্ব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
সকাল দশটার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সিসিএনএফ কো-চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সাল হতে প্রতি বছর বিশ্ব মানবিকতা দিবস উদযাপন করে আসছে সিসিএনফ। তিনি বিশ্ব মানবিকতা দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি কর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা ও যাতায়াত ভাতা প্রদানের যৌক্তিকতার কথা তুলে ধরেন। মুক্তির ক্যাম্পে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী কর্মী রুজিনা আখতারকে স্মরণ করেন আবু মোর্শেদ চৌধুরী।
সভার বিশেষ অতিথি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (এনজিও সেল) জিনাত শহিদ পিঙ্কি বলেন, আমরা অনেকেই সরাসরি মানবিক সহায়তায় কাজ করি। কিন্তু নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েও আমাদের মা বোনেরা তা সহ্য করে মানবিক কাজে অবদান রেখে চলেছেন। নারীদের শুধু মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে হবে না, পলিসি লেভেলেও তাদের কাজ করতে হবে। নারীকে শুধু প্রেরণাদায়িনী ভাবলে হবেনা,নারী ও পুরুষ উভয়ে উভয়কে প্রেরণাদানের মাধ্যমে সমাজকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।
এনজিও প্লাটফর্ম এর ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর মুনমুন গুলশান বলেন, মানবিক আবেদনে কাজ করতে গিয়ে নারীকর্মীরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। এগুলো তুলে এনে তা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে এবং নারীদের আরো বেশি বেশি ম্যানেজেরিয়াল কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। নারীরা আজ বেশি পিছিয়ে নেই, তাদের অর্জনগুলো ঠিকমত তুলে ধরতে হবে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়।
আইএসসিজি জেন্ডার ও যোগাযোগ বিষয়ক কর্মকর্তা মিস ম্যারী টুলিমুন্ড বিশ্ব মানবিকতায় নারীদের অবদান সম্পর্র্কে আলোচনা করেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের কথা গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানান।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা তাহের বলেন, “ফেইসবুকে রহিঙ্গা আগমনের খবর দেখে আমি অবাক হয়েছি, কিন্তু পরে জানলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। পরদিনেই অন্যান্য নেতা-কর্মীদের সাথে আমরা নারী নেত্রীরাও তাদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে স্থানীয় নারীরা ব্যাপক অবদান রেখে চলছেন।
সমাবেশে কক্সবাজারে কর্মরত ও সিসিএনএফ-এর সদস্যভুক্ত বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ৩০০ নারী কর্মী অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আখতার পাখি, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর জাহেদা বেগম, ব্রাক হেড অব অপারেশন খালেদ মোরশেদ, ইপসার ফোকাল পার্সন শহীদুল ইসলাম, মুক্তি কক্সবাজারের সমন্বয়কারী আশোক সরকার, -কোস্ট ট্রাস্ট এর সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ,হোপ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রাকিব, সমাজ কর্মী শামীম আকতার, সংবাদকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন শাকিল, ফাউন্ডেশন হিরনডেল-এর কর্মকর্তা ডায়ান জেন্স, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া প্রমুখ। বিভিন্ন এনজিও-র মাঠ পর্যায়ের আটজন মহিলাকর্মী তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্ট-এর জাহাঙ্গীর আলম ও তাহরিমা আফরোজ টুম্পা। সর্বশেষে সিএসও-এনজিও ফোরামের কো-চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।