ঢাকাবুধবার , ১২ ডিসেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রামু পিআইও অফিসে লোপাট কোটি টাকা!

প্রতিবেদক
সিএনএ

ডিসেম্বর ১২, ২০১৮ ১:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাভের পুরো টাকাটাই গেছে পিঁপড়ার পেটে’-বাস্তবে এরকমই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়-পিআইও অফিসে। উপজেলার গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে বরাদ্দ করা কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচি-কাবিটা এবং টেষ্ট রিলিফের-টিআর প্রকল্পের ‘জুন ফাইন্যালের’ সমস্ত টাকা-পয়সা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এরশাদ নামের একজন উমেদার (অফিস সহকারি)। ঘটনার কথা সবাই স্বীকার করলেও লোপাটের টাকার অংক নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
রামু উপজেলা পিআইও অফিসের অভ্যন্তরে লোপাটের এ অংক কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কোটি টাকারও বেশী বলে মনে করা হচ্ছে। উপজেলা অফিস থেকে সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের হিসাব দেখানো হয়েছে গেল জুনের ৩০ তারিখের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করা হয়েছে। পিআইও অফিসের হয়ে এসব প্রকল্পের কথা জানেন কেবল পলাতক অপিস সহকারি এরশাদ।
সেই সাথে প্রকল্পের বিপরীতে প্রকল্প কমিটিকে টাকাও দেয়া হয়নি। প্রকল্পের টাকা জুন ফাইন্যালে হিসাব-নিকাশ করে সবাই ভাগ-বাটোয়ারা করার কথা। এজন্য রামু উপজেলার বিদায়ী প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) জুন ফাইন্যালের সরকারি তহবিলের টাকা উত্তোলন করে জমা রাখার দায়িত্ব দেন অফিসটির ‘বিশ্বস্থ ওমেদার’ (অফিস সহকারি) হিসাবে কর্মরত মোহাম্মদ এরশাদকে। এরশাদ রামু সদরের মেরুংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা। অথচ এই বিশ্বস্থ এরশাদই রামু উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের বরাদ্দ করা উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে রামু উপজেলার কোন কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ লুৎফুর রহমান জানান,‘রামু পিআইও অফিসের এরশাদ বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে অফিসে আসছেন না। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের পুরো হিসাবটা দেখে জানাতে হবে। অপরদিকে রামুর পিআইও হিসাবে এতদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন জুবায়ের আহমদ নামের একজন। তিনি বর্তমানে চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
রামু উপজেলার কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাদের ইউনিয়নের মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার ও গ্রামীন রাস্তা-ঘাট সংষ্কারের প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ দেয়া টাকা জুন ফাইন্যালের পর তারা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এবারের প্রকল্পের কোন টাকাই তারা পাননি। একজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তিনি তার ইউনিয়নের ৬টি প্রকল্পে নিজের টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে পিআইও অফিসের কোন টাকাই পাননি। ইউপি চেয়ারম্যানদ্বয় স্বীকার করেন যে, প্রকল্পের কাজ শেষ হোক বা না হোক জুন ফাইন্যালে সরকারি বরাদ্দের হিসাব আগে দিয়ে দিতে হয়। বাস্তবে বেশীর ভাগ প্রকল্পেরই কাজ হয়নি।

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাস্তবে এরশাদ নামের যে কর্মচারি পিআইও অফিসে গত ৪/৫ বছর ধরে কাজ করে আসছে সেই পুরো উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামোর প্রকল্পের কাজ দেখভাল করে আসছেন। উমেদার হিসাবে পরিচিত এরশাদ নামের এই ব্যক্তিই পুরো উপজেলার যাবতীয় প্রকল্পের গম/চাল বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংকিং কাজ কর্ম পর্যন্ত সবকিছুই করে আসছে।
বাস্তবে কোথায় উন্নয়ন প্রকল্প সেটা এরশাদ ছাড়া রামুর অন্য কেউ জানত না। এভাবেই লোপাট হয়েছে রামু উপজেলার পিআইও অফিসের অভ্যন্তরে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন, এক সময় এরশাদ আমাকে বলেছিল নাইক্ষ্যংছড়িতে তার বিক্রি করা চালের ৩০ লাখ টাকা নাকি আটকে কোটি টাকা ! চালের ক্রেতাকে যাতে আমি বলি এজন্য সে আমাকে অনুরোধও করেছিল।
এদিকে রামু উপজেলার বর্তমান পিআইও ফরহাদ হোসেন জানান, ‘ভাই আমি একমাস আগে এখানে যোগ দিয়েছি। এরশাদ এখন অফিসে আসেনা। সেই সবকিছু জানে। আমি আসার পর লোপাটের ওই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। বেশ কঠিন বিষয় এটি। তিনি আরো বলেন, আগের পিআইও এবং এরশাদ ছাড়া বাস্তবে এসবের হিসাব-নিকাশ কারও জানারও কথা নয়। এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে গুরুত্বের সাথে।সুত্র দেশবিদেশ

সম্পর্কিত পোস্ট