(আনোয়ার হোছন)
কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।এদেশে অতীত কাল থেকেই হাজার ধরনের সংস্কৃতি পালন করা হয়। যার একটি নিদর্শন হলাে মৃৎশিল্প।
বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। ‘মৎ’ মানে মাটি আর শিল্প’ মানে সুন্দর সৃষ্টিশীল বস্তু। তাই মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মকে মৃৎশিল্প’ বলে, এবং যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জরিত তাদের বলা হয় কুমার। কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানাে সব কাজ করে থাকেন। এই শিল্পটি হল বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম একটি শিল্প যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই শিল্পের প্রতি এখন মানুষের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় খুরুশকুলের কুমারদের তৈরি মাটির বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র কক্সবাজার জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হলেও বতর্মানে মাটির তৈরী ঐসব তৈজসপত্র তেমন চোখে পড়ে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকে খুরুশকুলের শত শত পরিবার মৃৎশিল্প অর্থাৎ মাটির তৈরী তৈজসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বতর্মানে এই শিল্পের সাথে জড়িত আছে মাত্র ৪টি পরিবার।কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎশিল্প।
বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির অভাব ও লাকড়ির মূল্যবৃদ্ধি সহ নানা কারণে এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কুমাররা। শুধু তাই নয় প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন চাহিদা হারাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। যার ফলে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই আদি শিল্প। নিদারুণ কষ্টে জীবন পার করছে এই শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পীরা।
খুরুশকুলের মৃৎশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন বাসি রুদ্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে মানুষ মাটির তৈরী তৈজসপত্রের চেয়ে প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা তৈজসপত্র বেশি ব্যবহার করে।
ফলে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কুমাইজ্জা ছড়া থেকে সহজেই আমরা এই কাজে ব্যবহারের জন্য মাটি আনতে পারতাম এবং লাকড়ির দাম ছিল কম।
বতর্মানে স্থানীয় কুমাইজ্জা ছড়া ভরাট হয়ে বিভিন্ন মানুষের দখলে চলে গেছে। যার ফলে আমরা সহজে আর মাটি পাচ্ছি না। অন্যদিকে লাকড়ির দাম বেড়েছে বহুগুণ। তাই দিন দিন নিরুৎসাহিত হচ্ছে শিল্পীরা। সরকারী সহযোগী পেলে এই শিল্প আবারো আগের রুপে ফিরে আসতে পারে বলে মনে করেন এই শিল্পী।