গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের প্রায় আড়াই কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় শ্রীপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাসহ নয় জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। রবিবার (৪ জুলাই) শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শ্রীপুর থানায় দায়ের করা এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন– শ্রীপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান, মাস্টার রোল কর্মচারী তানভীর, অডিটর আরিফুল ইসলাম, বিলের সুবিধাভোগী সিবেন্দ্র চন্দ্র রায়, শাহানা আক্তার, রণজিৎ কুমার, সুবল চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায় ও ফুলমণি রানী। বিলের সুবিধাভোগী শেষোক্ত চার জনকে শনিবার কুড়িগ্রামের নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ওসি মামলার বিবরণ দিয়ে জানান, শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার ও তার দুই কর্মচারী সুকৌশলে সুবিধাভোগীদের অনুকূলে বিভিন্ন অংকের মোট ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকার অ্যাডভাইস ও বিল প্রস্তুত করেন। ১৭ জুন অ্যাডভাইস ও বিল সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখায় পাঠানো হয়। এসবের সঙ্গে বিলের হার্ড ও সফট কপি যুক্ত করা হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিশ্চিতের পর তাদের হিসাবে টাকা পরিশোধ করা হয়। পরে অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ১৮ জুন শ্রীপুরের সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী শাখা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে সুবিধাভোগী ব্যাংক হিসাবধারীদের পরিচয় কৃষক ও গৃহিণী হিসেবে নিশ্চিত হন তারা। পরে সুবিধাভোগীদের হিসাব ‘স্টপ পেমেন্ট’ করার জন্য নাগেশ্বরী শাখা অবহিত করে।
এদিকে, অ্যাডভাইস ও বিলের সত্যতা যাচাই করতে ২৯ জুন ব্যাংক ব্যবস্থাপকসহ একাধিক কর্মকর্তা শ্রীপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ও বিল তৈরিতে যুক্ত কর্মচারীদের সঙ্গে সশরীরে কথা বলে অসঙ্গতি চিহ্নিত করেন। একইদিন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিলটি স্থগিত রাখতে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে চিঠি দেন।
এদিকে, সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে তাদের সব ব্যাংক চেক সোনালী ব্যাংক উত্তরখান শাখার গ্রাহক শাহেনা আক্তার তার নিজ হিসাবে দাখিল করেন। সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশে অভিযুক্তদের প্রতারকচক্র ও অবৈধ সুবিধাভোগী হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান জানান, তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে অ্যাডভাইস ও বিল প্রস্তুত করে মাস্টার রোলে কর্মরত তারই অফিসের কম্পিউটার অপারেটর তানভির জালিয়াতি করেছেন। তিনি ৩০ জুন শ্রীপুর থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিলের হার্ড কপিতেও স্ক্যান করে তার স্বাক্ষর বসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ঘটনার পর থেকে তানভির পলাতক রয়েছেন।