ঢাকাসোমবার , ২৫ জুন ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নিরঙ্কুশ জয়ে আবারও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুন ২৫, ২০১৮ ১১:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

image

 নিউজ ডেস্ক: বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়েছেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। গত রোববারের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ৯৭ শতাংশ ভোট গণনার পর এরদোগান নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সাদি গুভেন। নির্বাচনে জয়ের পর সোমবার (২৫ জুন) দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় একে পার্টির প্রধান কার্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে লাখো সমর্থকের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এরদোগান। একই সঙ্গে এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করার মাধ্যমে এরদোগান হলেন দেশটিতে প্রথম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট। এর মাধ্যমে তিনি আগের তুলনায় বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। রয়টার্স, আল-জাজিরা।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফলে এরদোগানের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল ইসলামপন্থি একে পার্টি ও এর জোট মিত্ররা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৯৯ শতাংশ ভোট গণনার পর এরদোগান ৫২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী মুহাররেম ইনসের পেয়েছেন ৩১ শতাংশ ভোট। পার্লামেন্ট নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এরদোগানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছে এরদোগানের জোট। সিএইচপি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। ৬০০ আসনের পার্লামেন্টে এরদোগানের দল একেপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৩ জন এমপি। জোট শরিক এমএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৫০ জন। কামাল আতাতুর্কের দল সিএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৬ জন এমপি। তাদের জোট শরিক ইয়ি পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪ জন। সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনে হারার কথা স্বীকার করেনি। দলটি জানিয়েছে, ‘ফলাফল যাই হোক’ তারা তাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এর আগে তারা বলেছিল, নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডেই জয় পাবেন না এরদোগান।

স্থানীয় সময় ভোররাত ৩টার কিছুক্ষণ পরে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদর দফতরের বারান্দা থেকে পতাকা দুলিয়ে জয় উদযাপনরত সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এরদোগান বলেন, ‘আগামীকাল থেকে আমাদের জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করব আমরা।’ তুরস্কের কর্তৃপক্ষ আরও দৃঢ়সংকল্প নিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তুরস্কে অবস্থানরত ৩৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী যেন নিরাপদে দেশে ফিরতে পারেন সে লক্ষে তুরস্কের বাহিনী ‘সিরিয়ার ভূমি মুক্ত করা’ অব্যাহত রাখবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়া একে পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্সের অন্যতম দল এমএইচ পার্টির নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান এরদোগান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভাই-বোনদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। যারা আমার ওপর, আমাদের জোটের ওপর এবং আমার দলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।’ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে এরদোগান বলেন, ‘কাল থেকেই শুরু হবে আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। যেসব প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতিগঠন করতে পারব। আমরা আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধি করব। অবিলম্বে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। খুব দ্রুতই আমরা দেশের জাতীয় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার দূর করতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করব। একটি মুহূর্তও আমরা হারাতে চাই না।’

নির্বাহী ক্ষমতা প্রাপ্তি

সংশোধিত সংবিধানের অধীনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি পাচ্ছেন নিরঙ্কুশ নির্বাহী ক্ষমতা। গত বছরের গণভোটে সংসদীয় ব্যবস্থা বাতিল করে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থায় প্রবর্তনের রায় আসার পর এরদোগান হচ্ছেন তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট। নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোগান উল্লেখযোগ্য নির্বাহী ক্ষমতা পাবেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করতে পারবেন তিনি। নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্লামেন্টের মনিটরিং করার ভূমিকাও বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে এরদোগানের হাতে। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এরদোগান। ২০১৪ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। তার প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল এবং ধার্মিক অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তুর্কিরা। ২০১৬ সালের এক ‘ব্যর্থ গণঅভ্যুত্থানের’ পর ২০১৭ সালে এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেন এরদোগান। এতে তিনি দেশটিকে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে জনরায় পান। এরদোগান এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন এবং যে কোনো সময় সংসদ ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন।

৬৪ বছর বয়সী এরদোগান আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। শহুরে তরুণদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। নির্বাচনে এ জয়ের মাধ্যমে আরও পাঁচ বছর তুরস্ক শাসন করার সুযোগ পাবেন তিনি। তুরস্কের নতুন সংবিধান অনুসারে তিনি ২০২৩ সালের পর ফের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন। তখন জয়ী হলে ২০২৮ পর্যন্ত তিনিই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট থাকবেন। গত বছর হওয়া গণভোটের ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনে জিতলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন এরদোগান। এতে ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশটির গণতন্ত্র খর্ব হয়ে একে একনায়কতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাবে বলে শঙ্কা সমালোচকদের। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইরাকে কুর্দি বিদ্রোহীদের দমনে জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভের প্রত্যাশায় নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৬ মাস এগিয়ে এনেছিলেন তিনি। নির্বাচনে কাক্সিক্ষত জয় পাওয়ায় এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি দ্রুতই এগিয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনে জয়লাভের পর বিশ্বনেতারা এরদোগানকে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা পাঠাচ্ছেন। এরমধ্যে রয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, টার্কিশ রিপাবলিক অব নর্দার্ন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা আকিঞ্চি, বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসোভ প্রমুখ।

সম্পর্কিত পোস্ট