কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। ঢাকাকে টপকে এখন খুলনা করোনার অন্যতম হটস্পট।
শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা মহামারি।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ও আইসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।
কিছুক্ষণ পর পর শোনা যাচ্ছে বুকফাটা কান্না আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ। সদ্য চিরবিদায় নেওয়া স্বজনের নিথর মরদেহ নিয়ে আহাজারি করতে করতে হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করছেন অনেকে।
মৃত্যুর সারিতে রয়েছে যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত।
এদিকে, হাসপাতালে করোনারোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাতে অনেকটাই বিপর্যস্ত হাসপাতালগুলো।
খুলনা অক্সিজেন ব্যাংকের অর্থ সম্পাদক মো. আসাদ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বলতে গেলে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলোতে ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে নতুন করে রোগী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আসাদ জানান, বুধবার বিকেলে অক্সিজেন সংকটে থাকা বটিয়াঘাটার বিরাট এলাকা থেকে করোনায় আক্রান্ত খাদিজাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। আমরা সাধ্য অনুযায়ী অক্সিজেনের ব্যবস্থা করি। পরে তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে যাই। সেখানে বেড খালি নেই। অক্সিজেনেরও সংকট রয়েছে। জরুরিভিত্তিতে বিনামূল্যে অক্সিজেন দিতে দিন-রাত আমাদের ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে যাচ্ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুলনা বিভাগে রেকর্ড ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ পর্যন্ত বিভাগে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এই সময়ে বিভাগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৯০৩ জন।
বুধবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ আটজন, ঝিনাইদহে সাতজন, চুয়াডাঙ্গায় পাঁচজন, কুষ্টিয়ায় চারজন, যশোরে একজন, বাগেরহাটে তিনজন, সাতক্ষীরায় একজন, নড়াইলে একজন এবং মেহেরপুরে দু’জন মারা গেছেন।
মোট ২ হাজার ২৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৯০৩ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর আগের দিন এটি ছিল ৪৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে ৪৭টি নমুনা বেশি পরীক্ষা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) এ বিভাগে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ সময়ে দেশে মৃত্যু ও শনাক্তের হারে শীর্ষে ছিল খুলনা বিভাগ।
এদিকে, দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্য সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের ভেতর করোনারোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যেও উদাসীনতা। রোগী সেবার পর দিনশেষে গণপরিবহনে ফিরছেন যে যার বাড়ি। দীর্ঘদিন রোগীর সান্নিধ্যে থাকা স্বজনরা জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর নিবিড় সংস্পর্শে থাকায় স্বজনদের শরীরেও ভাইরাস প্রবেশ করছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যদের মধ্যে।
খুলনায় সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিন মঙ্গলবার কঠোরভাবে পালিত হলেও দ্বিতীয় দিন বুধবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। যদিও মানুষের চলাচল ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে এগুলো বাঁধা হয়েছে। কিন্তু মানুষ কারণে অকারণে বাস্তায় বের হচ্ছেন। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক।