ঢাকাসোমবার , ২৩ আগস্ট ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আদালতে ন্যায় বিচার চেয়ে সাক্ষ্য দিলেন সিনহার বোন

প্রতিবেদক
সিএনএ

আগস্ট ২৩, ২০২১ ৯:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সোমবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। আদালতে তিন জন সাক্ষী উপস্থিত থাকলেও প্রথম দিন এক নম্বর সাক্ষী মামলার বাদী সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ সময় তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। সাক্ষ্যগ্রহণকালে সাবেক ওসি প্রদীপসহ ১৫ জন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। মামলার প্রধান আসামি এসআই লিয়াকত আলী ও দুই নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবীরা শারমিন শাহরিয়াকে জেরা করবেন মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট)।

মামলার বাদী ও নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণ জেনে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে মামলা করি। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনে সাক্ষ্য দিয়েছি। আমাকে বিভিন্ন আসামির আইনজীবীরা জেরা করেছেন। আমি তার জবাব দিয়েছি। আমি বলেছি, এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলার বাদী মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য আসামিদের আইনজীবীরা জেরা করেছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের জেরা হবে মঙ্গলবার।’

এর আগে কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রদীপসহ ১৫ জন আসামিকে সকাল ১০টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের আনার পর আদালত চত্বরে হাজারো মানুষ ভিড় করে। বিকালে তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় সাধারণ মানুষ ওসি প্রদীপসহ সব আসামির শাস্তি দাবি করে নানা স্লোগান দেয়। এর আগে সকালে কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিত ও নিহতদের স্বজনেরা।

এর আগে আদালতের সমন দেওয়া ৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩ জন সাক্ষী যথাক্রমে বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস, টেকনাফের শামলাপুরের ডা. মৃত ফজল করিমের ছেলে মো. আবদুল হামিদ এবং শামলাপুরের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ইউনুচ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সোমবার সকালে আদালতে হাজিরা দেন।

সোমবার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত থেকে সমন দেওয়া সাক্ষী মেজর (অব.) সিনহার ‘জাস্ট গো’ ডকুমেন্টারি টিমের সদস্য সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাত, টেকনাফের মিনাবাজারের কাজী ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী অনুপস্থিত ছিলেন। সোমবার হাজিরা দেওয়া বাকি দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যও আদালতে নেওয়া হবে।

আদালতে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে ২৪ ও ২৫ আগস্ট। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রথম ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত থেকে সমন দেওয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার নুরুল কবির। প্রতিদিন পাঁচ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সন্তোষ বড়ুয়া বলেন, গত ২৭ জুন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার চার্জ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা যায়নি। সোমবার থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আদালত থেকে র‌্যাব-১৫-কে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।

এরপর সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাত জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গত ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আলোচিত মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি
বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন কারাগারে আছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট