সি এন এ ডেক্স :
ক্সবাজারের চকরিয়ার বেসরকারি জমজম হাসপাতালে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে মেডিসিনের কনসালটেন্ট হিসেবে রোগী দেখে আসছেন মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তবে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস) নিউরোলজিস্ট ডা. হুমায়ুন কবীর হিমুর বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিল।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জমজম হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় চিকিৎসকরা বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনের আসল চিকিৎসক হুমায়ুন কবীর হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ভুয়ার বিষয়টির সত্যতা মেলে।
জানা গেছে, ভুয়া চিকিৎসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (৪০) প্রতারণা করে বিয়ে করেছে স্বাস্থ্য খাতের একজন উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে। হুমায়ুন কবির মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার টরকীচর টরকী ইসলামপুর এলাকার দিদারুল আলমের ছেলে। অথচ বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনের আসল চিকিৎসককের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে। হুমায়ুন কবিরকে জমজম হাসপাতালের ২০১৯-২০-২০-২১ অর্থ বছরের হাসপাতালে লাইন্সেস নবায়ন করার জন্য তাকে বিশেষজ্ঞ ডা. দেখিয়ে অনলাইন আবেদন করে।
চকরিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত এ ভুয়া চিকিৎসকের আটকের বিষয়ে বলেন, জমজম হাসপাতালে হুমায়ুন কবির নামে একজন ভুয়া ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে অন্যের সনদ ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। সাধারণ রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সনদ যাচাই করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্টের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে একজন ডাক্তার পাঠানো হয়। তারা যাচাই করে দেখেন তার ডাক্তারি সনদ অন্যের। আটককৃত ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক জমজম হাসপাতালে বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট মো. রাহাত উজ জামান বলেন, অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির মূলত একজন ভুয়া চিকিৎসক। তার সকল ডিগ্রি ভুয়া। তিনি বিষয়টি গোপন করে একই নামের অপর এক চিকিৎসকের (হুমায়ুন কবীর সরকার) কাগজপত্র জালিয়াতি করে প্রতারণা করে আসছিল।
এ বিষয়ে নিনসের নিউরোলজিস্ট ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককের নাম ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা অন্যায়। আমি মনে করি, তার সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জড়িত। আমি ভুয়া চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শাস্তিও কামনা করি। এ ব্যক্তি কিছুদিন পর কারাগার থেকে বের হয়ে অন্য কোনো জায়গায় মানুষকে প্রতারিত করতে পারে। তাই সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে তুহিন তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গেল বছর ১৪ আগস্ট আমার আব্বার করোনা শনাক্ত হয়। আমরা এ ডাক্তারকে বিশ্বাস করতাম। তার কথায় জমজম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে শুরু করি। প্রথম দু’দিন রোগীর অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু এই ভুয়া ডাক্তারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে আব্বা আর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার পর আব্বা প্রচণ্ড অস্বস্তি লাগলে- ওই ডাক্তারকে বিষয়টি জানালে তিনি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর এসে জানায়, তাদের চিকিৎসা শেষ। আমরা তখন আব্বাকে কক্সাবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। ইমার্জেন্সি ডাক্তার দেখে আইসিইউ রেফার্ড করে। পরদিন সকালে আব্বা মারা যান। এর পর থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ডাক্তারকে বিশ্বাস করি না। আমি এ ভুয়া চিকিৎসকের ফাঁসি চাই।