![আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন](http://www.bd-journal.com/assets/news_photos/2018/08/02/image-39514-1533195207.jpg)
বুধবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরের ইংরেজি দৈনিক স্ট্রেইট টাইমস বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন সম্পর্কে লিখেছে, প্রায় ৩ হাজার ইউনিফর্ম পরা স্কুল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। তারা স্লোগান দেয়, আমরা ন্যায়বিচার চাই। তাদের একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, আমার কেন কবরে, খুনিরা কেন ঘুরে বাইরে?
‘Bangladesh students return to streets for 4th day in protest over deaths of pals’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা ও অনিয়মের নানা তথ্যও তুলে ধরেছে পত্রিকাটি। গণপরিবহন প্রায়ই চালানো হয় অনভিজ্ঞ, লাইসেন্সবিহীন ও অল্পবয়সী চালক দ্বারা। একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ২০০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। যা ২০১৬ সালের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
পত্রিকাটির খবরে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিতর্কিত মন্তব্যে সমালোচনার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই তার পদত্যাগ দাবি করছেন। এছাড়া বৃষ্টির দিনে অনেক যাত্রীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হলেও অনেকেই এই আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছেন বলে লিখেছে পত্রিকাটি।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া লিখেছে, বুধবার সহপাঠী নিহতের ঘটনায় ঢাকায় সড়কে নেমেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আগের তিনদিনের মতোই শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। সরকার দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। এতে বলা হয়, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, বাস দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় রাজপথ দখলে নিয়েছে ঢাকার স্কুল শিক্ষার্থীরা। এদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৩-১৫ বছর। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য সরকারের এক মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। একই সঙ্গে তারা সড়ক নিরাপদ করারও দাবি তুলে ধরেছে।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে কলকাতার বাংলা দৈনিকগুলোও। বৃহস্পতিবার শীর্ষ স্থানীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘ব্যস্ত রাজধানীর অবাধ্য ট্রাফিক ব্যবস্থাকে বশে আনতে রাস্তায় নেমেছে স্কুলছাত্ররা। মন্ত্রীর গাড়ি উল্টোপথে আসায় আটকে ঘুরিয়ে দিয়েছে তারা। লাইসেন্স না-থাকায় পুলিশের গাড়িও থামিয়ে দিয়েছে। কাগজপত্র পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হতে না-পেরে চাবি কেড়ে নিয়েছে বেশ কিছু চালকের। চার দিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।’ বুধবার প্রকাশিত দৈনিক আজকাল পত্রিকার প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘পড়ুয়া হত্যায় বাংলাদেশ উত্তপ্ত নজিরবিহীন ছাত্র বিক্ষোভে’। এতে বলা হয়েছে, ‘গত রবিবার রামিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর হত্যার বিচার চাইতে রাজপথে নেমেছেন বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা। তাদের এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন সাধারণ নাগরিকরাও। শুধু এই দুর্ঘটনাই নয়, বিক্ষোভে উঠে এসেছে গত এপ্রিলে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রথমে হাত ও পরে প্রাণ হারানো কলেজছাত্র মহম্মদ রাজীব হোসেনের নামও। বিক্ষোভের প্ল্যাকার্ডে রয়েছে হানিফ পরিবহনের গাড়িচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রকে খুন করেছিল, সেই সইদুর রহমানের ছবি। এ দুই ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, রবিবার নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থী দিয়া খানম (মীম) ও আবদুল করিমের (রাজীব) ছবিও। প্রশাসন ও সরকারের একাংশ পড়ুয়াদের আন্দোলন তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। সেই আবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে, ‘(আমরা ন’টাকায় এক জিবি ডেটা চাই না, নিরাপদ সড়ক চাই।)’ বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে তীব্র ক্ষোভের নিশানায় রয়েছেন পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান। তাদের বক্তব্য, শাহজাহান খান সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনও উদ্যোগ নেননি।’ এছাড়া ঢাকার শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে এবং জার্মানির ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণ দুটি।