মাটি হয়ে যা
— বিউটি দাশ
(১ম অংশ)
মাটি হয়ে যা
বলেছিল মা।
মেয়েদের নাকি মাটিই হতে হয় পৃথিবীতে,
বক্ষে ধরিত্রী যেরূপ সমস্ত কিছুই ধারণ সহ্য শক্তি রাখে।
বক্ষচিরে আর্তনাদে আমি
গজিয়ে আকাশচুম্বী
হতে আমি মৃত্তিকা।
আবেদনে নিবেদনে
প্রতি প্রহরে প্রহরে।
প্রহর তপ্ত চৈত্রের দুপুর খরায়,
ফাটল হাহাকার বক্ষে একটু জলের আশায়।
কি শীতল শান্তির বাতাসে
চেয়েছিলাম শুধু নিঃশ্বাস নিতে প্রাণভরে।
বিশ্বাসে সাহায্যের সাথে।
চৌচির শরীর ঢাকতে,
পুষ্প বৃষ্টি বর্ষণে, বৃক্ষতলে
অঙ্গে জড়িয়ে দিতে
হয়েছিলাম আমি মৃত্তিকা।
বাতাসরূপী মানুষে উড়িয়ে নিলেও আঁচল
বৃক্ষ বাতাস পুষ্প পল্লবে ভরিয়ে দেবে অশ্রুজল।
সেই আশায় হয়েছিলাম মৃত্তিকা
যখন বলেছিল মা মাটি হয়ে যা।
(২য় অংশ)
মাটি হয়ে যা
বলেছিল মা।
এই মাটি আমাকে কতটা খাঁটি করে
পর্যায় শেষ বক্ষ ছিন্ন করে।
নদী বানিয়ে আবহমান কাল হতে
আজও বহমান রাখে বয়ে যেতে।
নিজ অশ্রুধারার সাথে,
বয়ে যেতে স্থানে স্থানে।
আমার আপন কলঙ্ক ধারায়,
পিতার গৃহ, পতির গৃহ, পুত্রের গৃহ হারায়।
কলংকের ধারা বইতে ভুবনে,
মা কি তবে বলেছিল মাটি হয়ে যেতে?
স্থানে স্থানে কলংক, অপমানের ভার বইতে।
মাটি হয়ে সহ্য করব কত বল আর আমি,
মাটি তো রাখে সর্বশক্তি, উনি যে ধরিত্রী,
মনুষ্য শরীর আমার, মাটি হলেও রক্তে মাংসে গড়া আমি।
মাটি হয়ে যায় কি তবু এতটা সইতে
ভাবছি নদী হয়ে যাব সময় জীবন বইতে।
সত্যি কি পারছি হতে মৃত্তিকা নদী হইতে।
(৩য় অংশ)
মাটি হয়ে যা
বলেছিল মা।
কেবলই অগ্নি দগ্ধে দগ্ধে,
অগ্নি সংযোগে পুড়তে পুড়তে।
সক্রিয় সক্ষমে সক্ষমী অগ্নি,
আপনার চেয়ে আপনই সক্ষমে আসি।
জ্বলন্ত অগ্নিতে জ্বলতে জ্বলতে,
অনির্বাণ অগ্নি আজ আমার বক্ষে।
জীবনের মহিমায় বাস্তব নির্মমতায়,
আপনার চেয়েও আপনার সংঘর্ষে অগ্নিতে উপায়।
ক্ষমা কর মা নিরপেক্ষ নিক্ষিপ্তে আমার বিশ্বাস,
নিজ অগ্নিদগ্ধে দগ্ধ আমার নিঃশ্বাস।
বিশ্বাসে তোমার সন্তানের কারণে নির্মাতা
তোমারই সন্তান আজ আমি অগ্নি মাতা
আপন ভুবনে জ্বলবে আপন আগুনে।
আমি জ্বলব সাথে।
অগ্নি পুত্রের বিরহের সাগর বন্যা
হব, হতে চাই অগ্নিকন্যা।
তোমার পুত্র বানিয়েছে যা
নদীও না, না মৃত্তিকা
অনির্বাণ অগ্নিকন্যা।