স্বপন কান্তি দে:: প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ বিপর্যস্থ। তার অংশ হিসাবে বাংলাদেশেও চলছে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। গোটা দেশ এখন অঘোষিত জরুরী অবস্থার মতো। করোনা প্রতিরোধে সরকার সাধ্যের সব কিছু করছেন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, ব্যাংক ঋণ, এনজিও ঋণ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু ব্যয়বহুল শহরের বিভিন্ন পেশাজীবি ও ভাড়াটিয়া হিসাবে এখন আয়ের সমস্থ উৎস বন্ধ হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিষণ বেকায়দায় পড়েছে।
রোহিঙ্গা ও এন জি ও দের কারনে এমনিতে বাসা ভাড়া বেড়ে এখন প্রায় তিনগুন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য ও লাগামহীন গতিতে উর্ধমুখী । বাসা ভাড়াটিয়ারা মহা বিপদে, তাদের বাড়ি ভাড়া, বাসা ভাড়া, ছেলে-মেয়েদের স্কুল ফিঃ কি ভাবে দিবে এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। এ যেন মহা সংকটে মধ্যবিক্ত আয়ের বাড়াটিয়া ও এলকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা । দিশেহারা জীবন ধারনের পথ নিয়ে।
তাছাড়া সকল প্রকার দোকান, হোটেল বন্ধ থাকতে হচ্ছে। তারা ও মাসিক ভাড়াটা কি ভাবে কোথা থেকে দিবে সেই চিন্তায় অস্তির। সব মিলিয়ে পর্যটন শহর কক্সবাজারে অবস্থানরত বিভিন্ন এলাকার মানুষ এক অমানবিক পরিস্থিতির শিকার। এ অবস্থায় অনেক মানবিক বাড়ী মালিক ঘোষনা দিয়ে এক মাসের বাড়ী ভাড়া মওকুপ করেছেন। কিন্তু ব্যয়বহুল শহরের বাড়ী ভাড়া দিতে না পেরে হয়তো অনাকাঙ্কিত কিছু ঘটতে ও পারে। তাই সময় থাকতে শহরের বাড়ী ও অফিস-দোকান ভাড়া মওকুপের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাসা ভাড়া মওকুপের আবেদন করেন স্থানিয়রা।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক নেতা বোরহান উদ্দিন খোকন বলেন, সকল সরকারী বেসরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের তিন মাসের মাসিক ফিঃ মওকুপ করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে শহরের বাহারছড়া এলাকার কামাল উদ্দিন রহমান পিয়ারু বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও সিলেটের সিটি কর্ফোরেশনের মেয়রের মতো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে বসবাসরত নিম্নমধ্যবিত্ত যেসব পরিবার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন তাদের একমাসের ভাড়াও মওকুফ করার জন্য বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানান, বাড়িওয়ালারা যদি একমাসের ভাড়া মওকুফ করেন তাহলে সিটি করপোরেশন তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মাসের পানির বিল মওকুফ করবে। আর কেউ যদি এই দুর্দিনে মানুষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন তাহলে নেওয়া হবে যথাযথ ব্যবস্থা। এ ধরনের বক্তব্য আশা করছি আমাদের কক্সবাজার পৌর মেয়রের কাছে।
শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার ভাড়াটিয়া মুহিবুল্লাহ মুহিব বলেন, আমরা সাধারন মানুষ, কাজ করতে পারলে খেতে পারি , না পারলে খেতে পারিনা। এমন অবস্থায় করোনার কারনে আমরা এখন ঘরবন্দী। এক বেলা খেতে ও এখন কষ্ট হচ্ছে। তার উপর সামনে বাসা ভাড়া দিব কি ভাবে সেই চিন্তায় মরছি। এভাবে থাকলে আত্মহত্যার পথই কি বেছে নিতে হবে? অন্ততঃ বাসা ভাড়া মওকুপের ব্যবস্থা যদি সরকার করে দেয় তাহলে বড়ই উপকৃত হবো।
লুঙ্গি ব্যবসায়ী ভাড়াটিয়া আব্দুল করিম বলেন, ভাই এখন খুব কষ্টে আছি। ফরিদপুরে বাড়ী এ বৃদ্ধ বলেন, বাসা ভাড়ার কথা পরে বলবো, ভাত কি ভাবে খাচ্ছি সেই চিন্তা ও কি কেউ করছে? আমরা সরকারকে বলবো, যেখানে আমরা খেতে পারছিনা, সেখানে বাসা ভাড়া দিব কি ভাবে? আমাদের রক্ষা করেন। অন্ততঃ বাসা ভাড়া মওকুপের ব্যবস্থা নিন।
বাজার ঘাটার চায়ের দোকানের সওদাগর হালিম বলেন, ভাই আমি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাড়ায় দোকানটি নিয়েছি। এখন কোন আয় নেই দোকান বন্ধ। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে দোকান ভাড়া দিব কি ভাবে? আমাদের কথাটা কেউ চিন্তা করে কিনা জানিনা।
বাসাবাড়ীর মালিক টেনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বলেন, দেশের এ দুর্যোগ মুহুর্তে সকলের উচিত এগিয়ে আসা। বিত্তবানদের সবাইকে সাধারন মানুষের পাশে থাকতে হবে। আমি আমার ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুপ করেছি। সকল বাসাবাড়ীর মালিকদের অনুরোধ করবো, সবাই যেন অন্ততঃ এক মাসের বাড়ী ভাড়া মওকুপ করে মানবিকতার পরিচয় দেন। এক মাসের বাড়ী ভাড়া আপনাদের জন্য বড় কিছু নয়। দুর্যোগে মানবিক দিক বিবেচনা করলেন এটাই মানুষ মনে রাখবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। আসলে দোকান বাড়াটিয়ারা অত্যন্ত কষ্টে আছে। তারা ব্যাংক ও বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও চায়ের দোকান, পানের দোকানদার সহ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি কম পক্ষে ২ মাস দোকান ভাড়া মওকুপ করার বিষয়ে। আমরা দোকান মালিকদের অনুরোধ করবো কমপক্ষে ২ মাসের পারলে ৩ মাসের দোকান ভাড়া মওকুপ করে মানবতার পাশে দাঁড়ান।
এ বিষয়ে মানবধিকার তথ্য পর্যবেক্ষন সোসাইটির কক্সবাজার জেলা সভাপতি জাহাঙ্গির আলম বলেন, এ মুহুর্তে সবাইকে সবার পাশে দাঁড়ানো মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে। বিশে^র ও দেশের এ দুর্যোগের সময় সবার উচিত যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাই বাড়ী, বাসা, দোকান মালিকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে , কম পক্ষে এক মাসের ভাড়া মওকুপ করে মানবতার পাশে দাঁড়াতে।
এ বিষয়ে কোন ধরনের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি সকলকে বলবো কম পক্ষে ১০ দিনের বাসা ভাড়া যেন মওকুপ করে। কারন সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাব।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সরকার ব্যাংক ঋন, এনজিও ঋন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষে যতটুকু দরকার করে যাচ্ছেন। তবে বাড়ী ও দোকান মালিকদের এ দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি তাদেরকেও অসহায় মানুষের পাশে থাকার আহবান জানাচ্ছি। কম পক্ষে এক মাসের ভাড়া মওকুপের অনুরোধ করছি। আসুন সবাই সবার অবস্থান থেকে মানবতার পাশে দাঁড়াই।