কক্সবাজার: আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশি হেফাজতে থাকা মাদক ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ২৫২ জন ইয়াবা কারবারির তালিকা চূড়ান্ত করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। তাঁদের ধরার লক্ষ্য নিয়েই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছে, যাঁরা কোটি কোটি টাকার ইয়াবার চালান আনলেও পুলিশ তার কিছুই টের পায়নি। তাঁদের সঙ্গে ১৫ জন হুন্ডি ব্যবসায়ীও আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় তাঁদের কারও নাম নেই। অনেকের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই।
কক্সবাজার জেলা ও টেকনাফ থানার পুলিশের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য দিয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নিজেদের হেফাজতে রাখার কথা স্বীকার করেননি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, পুলিশের নিয়মিত অভিযান ও তদন্তে বেশ কিছু বড় কারবারির নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।
টেকনাফ থানার ওসি বলেন, পুলিশ নতুন করে যেসব বড় ইয়াবা কারবারির তালিকা করেছে, তাঁদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি আছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। কেউ কেউ ইয়াবার পাশাপাশি মানব পাচার করে থাকে, কারও কারও বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আছে বলে জানা গেছে।
আত্মসমর্পণের জন্য ৬৬ জন মাদক ব্যবসায়ী এখন কক্সবাজার জেলা পুলিশের হেফাজতে আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা হতে পারে। পুলিশ কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রথম দফায় ৮০ জন মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করতে পারে।
পুলিশ সুপার বলছেন, অভিযানের জন্য তাঁরা ২৫২ জনের যে তালিকা করেছে, তাঁদের ৫০ জনকে ‘গডফাদার’ হিসেবে মনে করছে। এত দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৭৩ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা ধরে অভিযান চলছিল। পুলিশের আশঙ্কা, তালিকায় না থাকায় এই ৫০ জন এত দিন নিরুপদ্রবেই তাঁদের কাজ চালিয়ে গেছে। ২৫২ জনের মধ্যে সাবরাংয়ের ৫৩ জন, টেকনাফ পৌরসভার ২১, শাহপরীর দ্বীপের ৭, হ্নীলার ৭৪, সদর ইউপির ৭০ ও অন্যান্য স্থানের আছেন ২৭ জন।
সূত্রগুলো বলছে, গুরুত্বপূর্ণ কারবারিদের মধ্যে আছেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শামসুল আলম ও তাঁর ভাই আলমগীর, কাটাবনিয়ার শওকত আলম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল এলাকার মো. তৈয়ব ওরফে মধু তৈয়ব, আলুর ডেইলের জাফর। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজাউল করিমও বড় কারবারি, তবে সম্প্রতি তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কক্সবাজার থেকে ইয়াবা চোরাচালানে হুন্ডির যত টাকা লেনদেন হয়, তার ৪০ শতাংশই টি টি জাফর নামে এক ব্যক্তি করে থাকে। জাফর বাংলাদেশ থেকে আলু রপ্তানি করতেন মিয়ানমারে আর মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু নিয়ে আসতো। তিনি সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার কেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটি চক্রের সদস্য।