ঢাকাশুক্রবার , ৩ জুন ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাহিত্যে পাতা- চুরি করবো কি করে! লেখক – বিউটি দাশ

প্রতিবেদক
এস কে দে - সম্পাদক

জুন ৩, ২০২২ ৪:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এস কে দে – সম্পাদক

চুরি করবো কি করে!
– বিউটি দাশ

মৃত-জীবিত সবাই যদি পাহাড়া দে চুরি করা কি তবে বন্ধ করে দিতে হবে!
এতোদিন শুধু জীবিতরা দিত এখন জীবিত-মৃত ঐক্যবদ্ধ হয়েছে! না খেয়ে কি মারবো তবে——-
যা হওয়ার পরে হবে। আগে চুরি করতে থাকি আর দাদামশাকে ও নজরে রাখি———-
যাক অনেকটা হলো দু-দিন অন্তত চলবে কিন্তু দাদামশাই এখনো তাকিয়ে আছে!যাক বাবা আর দরকার নাই এবার পালাই——

কিন্তু -দাদা মশাই এই নদী ভর্তি জলের উপর দিয়ে হাটে কি করে! আর মাথায় পাগড়ী পড়ছে কেন! একবার এপাহাড় একবার ও পাহাড় একবার শশ্মানে! আবার আমার দিকেও দেখি তাকাচ্ছে! দাদা মশাই তো মরেগেছেন তবু এভাবে হাঁটাচলা শশ্মানে দাড়িয়ে গাছের ডাল ধরে -আমার দিকে কেন তাকাচ্ছেন বারে বারে?
জীবিত মানুষদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি এদিকে আবার মৃত দাদা মশাই তাকিয়ে আছে! আর চুরি করবো কি করে! দুটি ফল চুরি করতে যদি এভাবে জীবিত- মৃত সবাই পাহাড়াদে। কি যন্ত্রণা এই চুরি করা!
ওদিকে আবার বাড়িতে ধোলাইয়ে শরীরের আস্ত রাখে না যদি ———
গতবারের ধোলাই এখনো শুকায়নি ভালো মতো তার মধ্যে এই দাদা মশাই।দাদা মশাইও কি জীবিত মানুষের মতো বাড়ি গিয়ে বলে দেব?
কি যে যন্ত্রণা ——–
বিউটি- নেভী আর নারা তুলিস না তাড়াতাড়ি এদিকে আয়, তোর বাবা দেখ। কোথায়? ঐ যে শশ্মানে সাদা ধুতি পড়ে———
নেভী- ও-মা! এটা তো আমার বাবা বলে, নেভী শব্দহীন তাকিয়ে আছে,
সাথে আমি ও, নেভী কি ভাবছে তা জানি না আমি তো চুরির কথা বাড়ি গিয়ে বলে দেবে কি না সেই চিন্তাই করছি,

বিউটি-অনেকক্ষণ পরে বলি,নেভী চল বাড়ি ফিরে যাই সন্ধ্যা ঘনিয়ে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি চল, যেগুলো তুলছিস ঐগুলাে নিয়ে আসি চল,অন্যথায় রাতে দিদি ভাত রান্না করতে পারবে না,চল চল——-
এতো চেষ্টা করি নেভী কোন কথাই বলে না! নড়েও না! কোন দুঃখে পড়লাম। আজ কি এই পাহাড়- শশ্মানেই থাকতে হবে নাকি?
নেভীকে আমি গরুর মতো ঠেলতে আরম্ভ করি কোন রকমে বাড়ি নিয়ে আসি।

নেভীর মা-বিউটি নেভীর কি হয়েছে? নেভী কথা বলছে না কেন? আর ওর চোখগুলো রক্তের মতো কি করে হল?
বিউটি -দিদি নেভী নারা তুলছিল আর আমি বেলা কাকার পানের বরছ থেকে ফল চুরি করছিলাম ওখানে দাদামশাইকে দেখি সেই থেকে নেভী আর কথা বলছে না।আর চোখ দু’টি ও এরকম হয়, আমি অনেক কষ্ট করে নেভীকে ঠেলে ঠেল নিয়ে এসছি।

হাতমুখ ধুয়ে রুমে উঠতে পারিনি মা-ঠাকুমাদের জিজ্ঞেসাবাদ-বিবরণ আর শেষই হচ্ছে না!
সাথে সবার বকাবকি চলমান। আমি বুঝতে পারছি না এতো বকা! কিন্তু আমি করেছিটা টা কি। এঁদের এতো বকাশুনার চাইতে ঐ দাদা মশাই—– পাহাড়-শশ্মানেই থাকলে ভালো অনেক হতো।
নেভীর মা- হঠা দিদি আবার আমার রুমে! বিকালে নেভীকে তুই কি বলছিল। দিদি তখন আমার খুব রাগ উঠেছিল কারণ নেভী খেলায় চুরি করছিল, তাই বলেছিলাম,এক চড় মেরে তোর বাবাকে দেখিয়ে আনব। চিনিস আমাকে? এটাই বলছিলাম।
নেভীর মা- এখন তো সত্যি সত্যি তাই করলি। এখন তোর ভালো লাগছে।——-

বিউটি-দিদি দেখি কাঁদে আর বলে কাকিমা আমার মেয়েটা বাঁচবে তো!
সবাই মিলে কি কি বলছে ঠিক বুঝতে পারছি না। শুধু এটা বুঝতে পারছি দাদামশাইকে নাকি ঠিক ওভাবেই শশ্মানে দিয়ে ছিল একটা ধূতি শরীর-মাথায় পাগড়ী বানিয়ে।
কিন্তু ভেবে পাচ্ছি না এখানে মরার কি হলো। দিদি কি বলে এসব——

রাত পোহাল আজানের শব্দ ভেসে আসছে, যাক নেভীকে একটু দেখে আসি। রুম থেকে খুব সাবধানে নামছি যাতে কেউ বুঝতে না পারে, যদি আবার সবাই আমাকে কালকের মতো বকে আর যেতে না দেয়।
গেলাম কোন কথাই বলে না আর চোখ! চোখ দিয়ে যেন আমাকেই খাবে! জ্বরও তেমন—–
গলায় দেখি কালো সুতো দিয়ে তাবিজ-আরো কি কি ———
এভাবে শব্দহীন প্রচন্ড জ্বরে ৭ দিন পার করলো নেভী। আস্তে আস্তে সুস্থ হচ্ছে,
নেভী-আমি জীবনে আর কোন দিন তোর সাথে পাহাড়ে যাব না।
তুই যে রকম বলছিস সে রকম তো করছিস।
বিউটি -কি আশ্চর্য, আমি তোকে কি করছি?
নেভী- তুই যে রকম বলছিলি আমার বাবাকে দেখিয়ে আনবি ঠিক তো তাই করলি।
বিউটি- আরে আমি তো এমনি বলেছিলাম সবাই যেরকম সচরাচ বলে থাকে।তাই বলে তুইও সবার মতো আমাকে এভাবে কেন বলছিস?
নেভী নিরবেই চলে যায় ——————–

নেভী পাহাড়ে ঘুরতে যেতো ওর বাবার শশ্মানে পূজা পার্বণে প্রদ্বীপ ও জ্বালাতে যেতে কিন্তু আমাকে ছাড়া। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। কিন্তু আমাদের দু’জনের একসাথে কাটানোর আর সে দিন ফিরে আসেনি শিশুকাল গেল-যৌবন
যুগ যুগ কেটে গেলে সেই থেকে নেভী আমার সাথে আর পাহাড়ে যায়নি কোনদিন আমার সাথে পাহাড়ে আর যাবেও না কোনদিন একসাথে!
কিন্তু আমার অপরাধ? জন্মের সাথে জড়িত!

সম্পর্কিত পোস্ট