‘তাড়াতাড়ি সুবাহানা ও রাব্বিকে নিয়ে বাসায় চলে যেও’— এটাই ছিল সুজন ও জান্নাত দম্পতির মাঝে মোবাইলে শেষ কথা।
রবিবার (২৭ জুন) বিকালে জান্নাত তার স্বামী সুজনকে মোবাইলে জানিয়েছিলেন যে, বিকালের পর তিনি (জান্নাত) মেয়ে সুবাহানা ও ছোট ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজারে শর্মা হাউজে কর্মরত এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। মোবাইলের অপর প্রান্তে থাকা স্বামী সুজন তার স্ত্রী জান্নাতকে বলেছিলেন, আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে তাড়াতাড়ি যেন সবিাহানা এবং রাব্বিকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। এটাই ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মোবাইলে সব শেষ কথা।
শিশুকন্যা সুবাহানা এবং স্ত্রী জান্নাতকে হারিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রবিবার (২৭ জুন) রাতে এমনই আহাজারি করছিলেন সুজন।
স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে কর্মরত সুজন তার পরিবার নিয়ে থাকেন মগবাজারের ওয়্যারলেস রেলগেট এলাকায়। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। দুর্ঘটনায় আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে এই খবর শোনার পর, কোন হাসপাতালে যাবেন, কোথায় খুঁজবেন এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন সুজন। স্ত্রী-সন্তান ও শ্যালকের খোঁজ করতে প্রথমে ছুটে যান ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে ৯ মাসের শিশু সুবাহানার মরদেহ দেখতে পান তিনি। ওই হাসপাতাল থেকে জানতে পারেন যে, আরও অনেককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। স্ত্রী জান্নাতের খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্ত্রীর দেখা পেলেও তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে পরবাসে পাড়ি দিয়েছেন জান্নাত। এ সময় ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন শ্যালক রাব্বিকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।
সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সুজন। কী করবেন কোনও দিশা পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ হবে না।’ একটু থেমে আবারও স্বজন হারানোর আহাজারি— কেন আজই (রবিবার) ওদের সেখানে যেতে দিলাম। আর সে জন্যই তাদের হারাতে হলো।’