(আনোয়ার হোছন)
সৈকত নগরী কক্সবাজার শহরে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের অত্যাধুনিক ছুরি। এসব অবৈধ ছুরি বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকলে কমে যেতে পারে ছিনতাই ও খুন সহ নানা ধরনের অপরাধ। এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।
জানা যায়, শহরের বার্মিজ মার্কেট, কৃষি অফিস রোড, সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, হিমছড়িসহ পুরো কক্সবাজার জুড়েই বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে এসব ছুরি। থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন ব্যান্ডের এসব ছুরি সহজেই কিনে নিয়ে পেশাদার ছিনতাইকারী ও বখাটেরা। তারা জড়িয়ে পড়ছে খুন, ছিনতাই ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে। দেশি-বিদেশি ছুরি শো-পিচ হিসেবে বিক্রির জন্য দোকানে রাখছে ব্যবসায়ীরা। থাইল্যান্ডের এসব ছুরি ৫ ইঞ্চি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৩/১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা। এসবের দাম ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। দেখতে অনেকগুলো ছুরি টিপু সুলতানের তলোয়ারের মতো। আবার অনেকগুলো সুইচের ছুরি। এসব ছুরি পেশাদার ছিনতাইকারী ও বখাটেরা বেশি কিনে বলে তথ্য পাওয়া যায়। বহনে সহজ হওয়াই এসব মরণাস্ত্র বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা।
কক্সবাজার শহরের আলোচিত হত্যাকান্ড গুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই হাতিয়ার হিসেবে ধারলো ছুরি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিগত ৪ বছর আগে এই ছুরি দিয়েই ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য পারভেজকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল ছিনতাইকারীরা, গত ২৮ জানুয়ারী জমি বিরোধের জের ধরে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে খুন হয় আপন চাচা মুজিব, গত ৩০ জানুয়ারী রাতে শহরের সাহিত্যিকা পল্লী এলাকায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হয় সাইফুল ইসলাম প্রঃ সাহাবু, গত ২৮ মার্চ সিটি কলেজ গেইটের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে খুন হয় কলেজ ছাত্র রিদুয়ান, গত ০৪ এপ্রিল পিএমখালীতে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় জাহাঙ্গীর নামে এক যুবক, গত ৮ এপ্রিল দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে কক্সবাজার ঝাউতলা এলাকার রিগ্যান, গত ১২ এপ্রিল রাতে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন ব্যবসায়ী আবুল কালাম, গত ২৬ জুন খরুলিয়া এলাকায় কথা কাটাকাটির জেরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় মোরশেদ কামাল নামে এক যুবক, গত ২১ জুলাই শহরের পেশকার পাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় ছাত্রলীগ নেতা ইমন, গত ১৬ আগস্ট শহরের বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় ১১নং ওর্য়াড কাউন্সিলর নুর মোহাম্মদ মাঝুর ছেলে মোঃ সেজান, গত ১৩ নভেম্বর শহরের চন্দ্রিমা এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় ফটোগ্রাফার ইউসুফ। এছাড়াও ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার খবর নিত্যদিনের বিষয়। উল্লেখ্য গত ১৪ নভেম্বর অবৈধ ছুরি বিক্রিয়কারীদের বিরুদ্ধে শহরের বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান করেন সদর মডেল থানা ও শহর পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম।
শহরের বিভিন্ন দোকানে প্রকাশ্যে দেশি-বিদেশী ধারালো ছুরি বিক্রির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার সদর সার্কেল জনাব মো: মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন দোকানে ছুরি বিক্রিয়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে আমরা সিন্ধান্ত গ্রহণ করেছি। যেসব দোকানে ছুরি ও চাকু বিক্রি হয় তাদের নিরুৎসাহিত করতে এসব দোকান মালিকদের সাথে কথা বলা সময় বেধে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ১৪ নভেম্বর অবৈধ ছুরি বিক্রিয়কারীদের বিরুদ্ধে শহরের বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান করা হয়। এসময় বেশকিছু ছুরি উদ্ধার করা হয়।
এসব ছুরি বিক্রয়য়কারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।