জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ফের তামাশা শুরু করেছে মিয়ানমার। প্রথম দফায় একসঙ্গে ২ হাজার ২শ ৬০ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও, তাদেরকে ধাপে ধাপে নেয়ার কথা জানিয়েছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে প্রথম দফায় মাত্র দেড়শ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে নাইপিদো। এই অবস্থায় স্বেচ্ছায় নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা বলেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলতে আগামী সপ্তাহে আসিয়ানের ৩৩তম সম্মেলনে যাওয়ার কথাও রয়েছে তার।
এদিকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন, তারা সবাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে উদগ্রিব। এছাড়া রোহিঙ্গারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। অথচ প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা কোনো না কোনো পয়েন্টে দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সফর শেষে মিয়ানমারে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বলেছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার বালাকৃষ্ণানের সঙ্গে নাইপিদোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিসহ দেশটির কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার বৈঠক হয়। বিভিন্ন সময় রঙ বদলানো সুচি বালাকৃষ্ণানের সঙ্গে বৈঠকে ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এছাড়া ১১ থেকে ১৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে আসিয়ানের ৩৩তম সম্মেলনে সুচিকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। আসিয়ানের এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু আগ্রাধিকার পাচ্ছে। ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান বলেন, অং সান সুচি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন তারা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশ থেকে যারা ফিরে আসবে তাদের গ্রহণ করতে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি চলছে। সুচিও চান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেন স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও পর্যাদাপূর্ণ হয়।
১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রথম ধাপে কেবল ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। প্রত্যাবাসনের জন্য ১৫ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২ হাজার ২শ ৬০ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন ১শ ৫০ জন করে রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে হংকং ভিত্তিক একটি গণমাধ্যমে জানান দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী স্থায়ী সচিব অং কাউ জান।
এদিকে টেকনাফের কেরুনতলী সীমান্ত দিয়ে প্রথম দফায় রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে। এ কাজে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনইচসিআর। তাদের সহযোগিতায় নৌকাযোগে প্রথমে মিয়ানমারের মংডুতে যাবে রোহিঙ্গারা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এরপর তাদের নয়া ঠিকানা হওয়ার কথা রাখাইনের নবনির্মিত আবাসস্থলে।