নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর কাউন্সিলর মো. একরামুল হককে বন্দুকযুদ্ধের নামে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করছি। ৩১ মে সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত একরামুল হকের ২ মেয়ে তাহিয়াত (১৪) ও নাহিয়ান (১১), একরামুলের মেজভাই নজরুল ইসলামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ সময় তারা সাংবাদিকদের একটি অডিও রেকর্ড দিয়ে সেটি ২৬ মে রাতে একরামুল নিহত হওয়ার সময়ের বলে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা অভিযোগ করে বলেন, ‘২৬ মে রাতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মেজর পরিচয় দিয়ে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আমার স্বামী মোবাইলে আমার মেয়ে ও আমার সঙ্গে কথা বলেন। তখন তার কণ্ঠে আতঙ্ক ছিল। এরপর থেকে আমার মোবাইলটি সারাক্ষণ খোলা ছিল। এতে রেকর্ড হচ্ছিল। ওই দিন রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিৎকার ও গুলির শব্দ শুনেই আমি ও আমার পরিবার আঁতকে উঠি। তখনই বুঝতে পারি আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সম্পূর্ণ নিরপরাধ। ইয়াবা ব্যবসা দূরের কথা, তিনি কখনও কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে চলাফেরা করেননি। বন্দুকযুদ্ধের নামে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে যে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ সাজানো।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ১২ বছর টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। যতটুকু জানি, তিনি সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি টেকনাফ বর্ডার গার্ড পরিচালিত পাবলিক স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য। থানায় তার নামে কোনও মামলা ছিল না। তিনি একজন ন্যায়বান ব্যক্তি ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। নিজস্ব কোনও বাড়িঘরও করতে পারেননি। এখনও আমরা পৈতৃক বাড়ির একটি কক্ষে থাকি। আমি স্বামীর হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে র্যাব ৭-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করে বারবার কেটে দেয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এর আগে র্যাব-৭ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মিলে মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, এখন ওই তালিকা ধরে অভিযান চলছে। সব তালিকায় একরামুল হকের নাম মোট পাঁচবার এসেছে। আপনারা জানেন, এই এলাকায় বড় বড় ইয়াবা ডন রয়েছে। এর অধিকাংশের বিরুদ্ধে একটি মামলাও নেই। ঠিক একইভাবে নিহত একরামুল হক কমিশনার একজন প্রভাবশালী কমিশনার ছিলেন। তার প্রভাবটি আসত ইয়াবার টাকা থেকে। এখন যদি কেউ দাবি করেন একরাম নির্দোষ, তাহলে তো কোনোমতেই মেনে নিতে পারছি না। উল্লেখ্য, ২৬ মে রাত ১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ার নোয়াখালীয়াপাড়া সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়কে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হন বলে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।